Monthly Archives: October 2014
সব বুদ্ধিজীবীকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা ছিল

আজাদুর রহমান চন্দন

১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি যখন বিজয়ের উল্লাসে উদ্বেলিত, তখনো রাজধানীর শত শত মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ ছিল না। কারণ দুই দিন আগেই ব্ল্যাক আউট আর কারফিউয়ের মধ্যে তাদের স্বজনদের বাড়ি থেকে তুলে নেয় কালো সোয়েটার আর খাকি প্যান্ট পরা মুখোশধারী হায়েনারা। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে যাঁদের তুলে নেওয়া হয়, তাঁরা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক, প্রতিথযশা সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী–এক কথায় বুদ্ধিজীবী। দেশের ওই মেধাবী সন্তানরা আর ফিরে আসেননি। বিজয়ের দুই দিন পর ঢাকার রায়েরবাজারে সন্ধান মিলল একটি বধ্যভূমির। পরিত্যক্ত এক ইটখোলার জল-কাদায় চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় পড়ে ছিল অসংখ্য লাশ। ওই লাশগুলোই ছিল বুদ্ধিজীবীদের।
এ বিষয়ে ১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানি সেনা ও স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া তাদের সহযোগীরা প্রায় ৩০০ বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে যায়, যাঁদের মধ্যে ১২৫ জন চিকিৎসক, অধ্যাপক, লেখক ও শিকের লাশ পাওয়া গেছে ঢাকার শহরতলির এক বধ্যভূমিতে। Continue Reading →

আলবদর ছিল গোপন কমান্ডো বাহিনী

আজাদুর রহমান চন্দন

‘ধর্মান্ধ ছাত্রদের নিয়ে গোপনে তৈরি হলো আলবদর বাহিনী। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক ও ছাত্রদের গোপনে হত্যার চক্রান্ত করে। শুধু গোপন চক্রান্তই নয়, আলবদর বাহিনী ওই সব হত্যাকাণ্ড সংঘটিতও করেছিল লোকচুর আড়ালে।… জামায়াতে ইসলামীর মতো সংগঠনের ধর্মান্ধ মানুষগুলোকে ধর্ম রার নামে উদ্বুদ্ধ করে তাদের নিয়ে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ গোপনে গঠন করেছিল ওই দল। এদের একান্ত সহযোগিতায় আরো হত্যায় বিষাদক্লিষ্ট হয়েছে পূর্ব পাকিস্তান।’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনুসন্ধান শেষে কথাগুলো লিখেছিলেন মার্কিন সাংবাদিক ও গবেষক রবার্ট পেইন তাঁর ‘ম্যাসাকার’ গ্রন্থে।
জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে ১৯৭১ সালে গঠন করা হয়েছিল কুখ্যাত আলবদর বাহিনী। নিউ ইয়র্ক টাইমসে ১৯৭২ সালের ৩ জানুয়ারি এক বিশেষ প্রতিবেদনে আলবদর বাহিনীকে উগ্র মুসলিমদের একটি গোপন কমান্ডো ধরনের সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের একটি বিশেষ দল এ বাহিনীকে প্রশিণ দিত এবং পরিচালনা করত। ওই সেনা কর্মকর্তাদের একজন ছিলেন ক্যাপ্টেন তাহির। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর ডেস্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পাওয়া যায়। একটি নোটে লেখা ছিল, ‘ক্যাপ্টেন তাহির, ভেহিকল ফর আলবদর’ এবং ‘ইউজ অব আলবদর’। Continue Reading →

চক্রান্তে শুরু চক্রান্তেই শেষ

আজাদুর রহমান চন্দন

পরাধীন ভারতবর্ষে নানান মতে নানান দলে দলাদলি সত্ত্বেও আলেম-ওলামা, সুফি, সাধু-সন্ন্যাসীসহ সব জাতপাত, শ্রেণি-পেশা ও দলের মানুষ যখন স্বাধীনতা কামনায় ‘মানব না এ বন্ধনে, মানব না এ শৃঙ্খলে’ বলে একাট্টা, তখনো এ ভূখণ্ডের ক্ষুদ্র একটি অংশ লিপ্ত ছিল ব্রিটিশ শাসকদের তাঁবেদারিতে। এর কারণও ছিল। জামায়াতে ইসলামী নামে ধর্মের লেবাস পরা ওই দলটির যে জন্মই দেওয়া হয়েছিল ব্রিটিশ প্রভুদের তাঁবেদারি করার জন্য। গোলাম আযমের গুরু মওদুদীর গড়া দলটি সেই কাজ ভালোভাবেই সেরেছে তখন। তবে তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়। তবে ধর্ম ব্যবসায়ী একটি মহলের চক্রান্তের সুযোগে ভারতবর্ষকে দুর্বল করার হীন উদ্দেশে তখন তথাকথিত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ করা হয় দেশ। ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টির কোনো মিল না থাকা সত্ত্বেও হাজার মাইল দূরে থাকা দুটি ভূখণ্ডকে এক রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করা হয়। যদিও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও গোলাম অযমের দল জামায়াতের সমর্থন ছিল না। গোলাম আযমের গুরু ও জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী তখন বলেছিলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি করা কেউই ‘খাঁটি মুসলমান’ নয়।

Continue Reading →