আজাদুর রহমান চন্দন
সাংগঠনিক বা প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন স্তর বিন্যাসে বিরাজমান বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে অপরাধের দায় নিরূপণ বিষয়ে একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি হলো- অধীনস্থদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের দায় ঊর্ধ্বতন অবস্থানে থাকা ব্যক্তির ওপর গিয়ে সরাসরি বর্তায়। ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’ নামের এই নীতি ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠা করে ন্যুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল। এই নীতির ভিত্তিতে তখন রিবেনট্রপ, ফ্রাংক, রোসেনবার্গ ও জুলিয়াস স্ট্রেইচারসহ নাজি যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডসহ অন্যান্য দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। টোকিও ট্রায়ালেও এই নীতি প্রয়োগ হয়। বাংলাদেশেও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৪(২) ধারায় উল্লেখ আছে এই নীতি।
আইনে উল্লেখ থাকলেও মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম দিককার মামলাগুলোতে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি তুলে ধরেনি বা তুলে ধরতে পারেনি প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা ও জনদাবির মুখে সরকার প্রসিকিউশনে কিছু পরিবর্তন আনে। আরো কয়েকজনের সঙ্গে প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ড. তুরিন আফরোজকে। মুক্তিযুদ্ধকালীন আলবদর হাইকমান্ডের অন্যতম সদস্য মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার বিচার কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়েই প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ শুরু করেন তুরিন। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) অবশ্য দাখিল করা হয়েছিল আগেই। তাতে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির নীতি সামনে আনা হয়নি। তা সত্ত্বেও শুনানিকালে তুরিন আফরোজ বিষয়টি সামনে আনেন প্রথমবারের মতো। এর ফলে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনালের রায়েও প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠিত হয় এই নীতি। Continue Reading →