আজাদুর রহমান চন্দন
একাত্তরের পঁচিশে মার্চ কালরাতে ঢাকায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে গণহত্যা আর ধ্বংসের যে তাণ্ডবলীলা শুরু করেছিল হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী, দ্রুতই তারা এর বিস্তার ঘটিয়েছিল সারাদেশে। সেই রাতের সামরিক অভিযানের ভয়াবহতা প্রকাশ করতে গিয়ে পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানেরই এক সেনা কর্মকর্তা তার বইয়ে লিখেছেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগেই অ্যাকশন শুরু হয়ে গিয়েছিল।… খুলে গিয়েছিল নরকের সবকটি দরজা।’ এভাবেই হানাদাররা পরবর্তী ৯ মাসে গোটা বাংলাদেশকেই এক বিশাল নরকে পরিণত করেছিল, যা দেখে মার্কিন সাংবাদিক সিডিনি এইচ শনবার্গ নিউইয়র্ক টাইমসে লিখেছিলেন ‘‘বেঙ্গলি’স ল্যান্ড অ্যা ভাস্ট সিমেটারি’’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি সিকান্দর আবু জাফরের লেখা এক বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল পূর্বদেশ পত্রিকায়, যার শিরোনাম ছিল ‘গ্রামে গ্রামে বধ্যভূমি তার নাম আজ বাংলাদেশ’। আর গোটা বাংলাদেশকে বধ্যভূমি বানানোর সেই দুষ্কর্মে সক্রিয় সহযোগিতা করেছিল হানাদারদের স্থানীয় কিছু দোসর শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামে নানা সংগঠন ও বাহিনী গড়ে। এদের মধ্যে আলবদর নামের জল্লাদ বাহিনীটি হয়ে উঠেছিল হানাদার বাহিনীর ‘ডেথ স্কোয়াড’।
একাত্তরে আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী। মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের পরাজয় যখন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে, তখন নিজামীর নেতৃত্বাধীন ওই জল্লাদ বাহিনীই পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিতভাবে ধরে নিয়ে টর্চার সেলে নির্যাতনের পর বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করে নিষ্ঠুরতম কায়দায়। নিজামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দল) উত্থাপন করা ফরমাল চার্জে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিবরণ থাকলেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আকারে ছিল না। পরে অভিযোগ গঠনকালে ট্রাইব্যুনাল নিজ ক্ষমতাবলে নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬ নং অভিযোগ হিসেবে এটি অন্তর্ভুক্ত করেন। এতে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে নিজামীর ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’ তুলে
আজাদুর রহমান চন্দন
ফ. কা. চৌধুরী নামে পরিচিত চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের (কনভেনশন) সভাপতি। ষাটের দশকে পাকিস্তানের মন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকারও হন ফ.কা.। সারা পাকিস্তানেই তিনি ছিলেন প্রচণ্ড প্রতাপশালী। ফ.কা. চৌধুরী এতটাই প্রভাবশালী ও দাম্ভিক ছিলেন যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরু করার পর মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, পিডিপিসহ দালাল দলগুলোর অন্য নেতারা দল বেঁধে গভর্নর টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও ফ.কা. তার সঙ্গে দেখা করেছেন শুধু নিজ দলের জেনারেল সেক্রেটারি মালিক মোহাম্মদ কাসিমকে নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধকালে শান্তি কমিটিরও আলাদা একটি ধারা ছিল ফ.কা.র নেতৃত্বে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর তার প্রভাব ছিল যেমন অসীম, তেমনি চট্টগ্রামে মুক্তিকামী মানুষ, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর তার নির্যাতনও ছিল অসহনীয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পর থেকে আত্মসমর্পণের কয়েক দিন আগ পর্যন্ত তার বাসায় সব সময় মোতায়েন থাকত পাকিস্তান বাহিনীর এক প্লাটুন সৈন্য। ফ.কা.র অনুচরেরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে আনত নিরপরাধ লোকজন আর ছাত্রদের।
আজাদুর রহমান চন্দন
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি অবশেষে কার্যকর করা হয়েছে। আদালতের রায় অনুযায়ী আজ শনিবার রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে শীর্ষস্থানীয় এই দুই অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে আইজি প্রিজন্স জানান। এর মধ্য দিয়ে দেশে প্রথম কোনো মন্ত্রীর ফাঁসি কার্যকর হলো। দুই অপরাধীই ভিন্ন ভিন্ন সরকারের সময় মন্ত্রী ছিলেন। দুজনের মধ্যে একাত্তরের কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদের প্রাণদণ্ড দেওয়া হয় বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে। একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে এটিই প্রথম ফাঁসি। তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এ নিয়ে চারজনের ফাঁসি কার্যকর হলো। ফাঁসি কার্যকর শেষে র্যাব ও পুলিশ প্রহরায় সাকা চৌধুরীর লাশ চট্টগ্রামে এবং মুজাহিদের লাশ ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিচার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দম্ভোক্তি প্রকাশকারী দুই মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করার আগে কারাগার এলাকায় জড়ো হন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এবং গণজাগরণ মঞ্চের কয়েকজন কর্মী। তাঁরা সাকা ও মুজাহিদের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করার দাবিতে স্লোগানও দেন। Continue Reading →
আজাদুর রহমান চন্দন
১৯৭১ সালে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে বেশি ছিল রাজধানী ঢাকায়। নগরীতে সেনাবাহিনীর সার্বক্ষণিক টহল তো ছিলই, তার ওপর নগরবাসীর কাছে আরেক আতঙ্ক ছিল অবাঙালি বিহারিরা। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ভাষায়, ‘প্রায় প্রায়ই গুজবের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে– মোহাম্মদপুর-মিরপুর থেকে বিহারিরা দলে দলে বেরিয়ে পড়ে এদিকপানে আসবে। একটা তাৎক্ষণিক হৈচৈ পড়ে যায় চারপাশে।’ পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী, বিহারি আর স্থানীয় রাজাকার-আলবদরদের হাতে পুরোপুরি নজরবন্দি অবস্থায় ছিল ঢাকায় থেকে যাওয়া বাঙালিরা। এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ– রাত নামলেই ব্ল্যাকআউট, কারফিউ আর বাড়ির দরজায় আতঙ্কজনক কড়ানাড়া, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি। এমন এক অবরুদ্ধ, অন্ধকার, আতঙ্কের নগরীতে একরাশ আলোর ঝলকানি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন একদল মুক্তিপাগল মেধাবী তরুণ বাঙালি। তাঁদের দলের নাম ছিল ক্র্যাক প্লাটুন। অনেকেই বলত ‘বিচ্ছু বাহিনী’। বদি, রুমী, জুয়েল, স্বপন, কামাল, আজাদ, আলম, আলতাফ মাহমুদ… একঝাঁক উজ্জ্বল তারকা নিয়ে গঠিত হয়েছিল সেই বিচ্ছু দল। তাঁদের কেউ নামকরা ছাত্র, কেউ সুরকার, কেউ খেলোয়াড়।
আজাদুর রহমান চন্দন
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি একাত্তরের নরঘাতকদের বিচার দেখার প্রতীক্ষায় কাটিয়েছে চার দশকেরও বেশি সময়। নানা অনিশ্চয়তা, হতাশা আর দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে জাতির কলঙ্ক মোচন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রথম ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বাংলাদেশের ৪৩তম বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে। সেদিন রাত ১০টা ১ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় কসাই কাদের নামে পরিচিত আলবদর কমান্ডার আবদুল কাদের মোল্লাকে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার ফাঁসি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জাতির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। এর মাধ্যমে একাত্তরের নির্মমতার বিচারহীনতা থেকে মুক্তি পেতে শুরু করে জাতি। অনেক দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা, গাফিলতি, চক্রান্ত সত্ত্বেও চলমান রয়েছে সেই বিচারকাজ। এরইমধ্যে গত ১১ এপ্রিল ফাঁসিতে ঝুলিয়ে প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘাতক আলবদর বাহিনীর বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান সংগঠক মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের, যিনি যুদ্ধের শেষ দিকে আলবদর হাইকান্ডেও ঠাঁই পেয়েছিলেন। কুখ্যাত সেই বদর বাহিনীর প্রধান আলী আহসান মুজাহিদের প্রাণদণ্ড বহাল আছে আপিলের রায়ে। এখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপক্ষায়। এসবই জাতির জন্য সুখবর। তবে চার দশকের কলঙ্ক মোচনের এই বিচার চলাকালে সময়ে সময়ে জাতির কাঁধে ভর করেছে ভয় আর হতাশা। Continue Reading →
আজাদুর রহমান চন্দন
মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম দূরের কথা, দেশেই ছিলেন না–এমন দাবি করে আসছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, যিনি সাকা চৌধুরী নামেই বেশি পরিচিত। দাবি প্রমাণ করার হাজারো কসরত করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে এই আসামি নিজের পক্ষে কয়েকজন সাফাই সাক্ষী হাজির করেছেন, যাতে প্রমাণ করা যায় ১৯৭১ সালে তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। সাকা চৌধুরীর পক্ষের আইনজীবীরা দাবিটিকে ‘প্লি অব অ্যালিবাই’ (অপরাধ সংঘটনের সময় আসামির অপরাধস্থলে উপস্থিত না থাকার দাবি) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। ফৌজদারি অপরাধের যেকোনো মামলায় প্লি অব অ্যালিবাই প্রমাণিত হলে আসামিকে দোষী প্রমাণ করার আর কোনো সুযোগ থাকে না। এ বিবেচনায়ই হয়তো আসামিপক্ষ ট্রাইব্যুনালে তো বটেই এমনকি আপিল বিভাগেও এ বিষয়ের ওপর জোর দেয় সবচেয়ে বেশি। Continue Reading →
আজাদুর রহমান চন্দন
বুদ্ধিজীবীদের ঘাতক ও মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের জন্ম ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পশ্চিম খাবাশপুর গ্রামে ১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি। তার বাবা আব্দুল আলী (মৃত) মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন শান্তি কমিটির সদস্য। মুজাহিদ প্রাথমিক শিক্ষা শেষে প্রথমে ময়েজুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং পরে ফরিদপুর জিলা স্কুলে ভর্তি হন। বাবার পথ অনুসরণ করে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় মুজাহিদ যোগ দেন জামায়াতের তখনকার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘে। ১৯৬৪ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি ভর্তি হন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে। রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি হন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে তিনি ঢাকা জেলা ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি হন। পরে মুক্তিযুদ্ধ চলা অবস্থায় ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে মুজাহিদ পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পান। তখন সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী। মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজামী ও মুজাহিদের নির্দেশে ও তত্ত্বাবধানে ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল কুখ্যাত আলবদর বাহিনী। Continue Reading →
আজাদুর রহমান চন্দন
চট্টগ্রাম শহরের নন্দনকানন টিঅ্যান্ডটি অফিসের পেছনের সড়কে এক হিন্দু পরিবারের মালিকানাধীন মহামায়া ভবনটি ১৯৭১ সালে আলবদর বাহিনী কেড়ে নিয়ে এর নাম দিয়েছিল ডালিম হোটেল। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত ডালিম হোটেলই ছিল চট্টগ্রামে আলবদর ও রাজাকারদের অন্যতম নির্যাতনকেন্দ্র। এ বন্দিশিবির ও নির্যাতনকেন্দ্রে আলবদরদের হাতে নির্যাতনের শিকার ও খুন হয়েছেন চট্টগ্রামের অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী বাঙালি। আর একাত্তরে ইসলামী ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি হিসেবে সেখানকার আলবদরের প্রধান ছিলেন মীর কাসেম আলী। ওই সময় তাঁর নেতৃত্বাধীন আলবদর বাহিনীর নির্যাতনের স্মৃতি স্মরণ করে আজও শিউরে ওঠেন চট্টগ্রামের অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী বাঙালির বিরুদ্ধে মীর কাসেম আলীর নৃশংসতা এতটাই তীব্র ছিল যে একাত্তরের শেষ দিকে তাঁকে পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদকের পদে বসানো হয়েছিল। সেই সুবাদে আলবদর হাইকমান্ডেও ঠাঁই হয়। Continue Reading →
আজাদুর রহমান চন্দন
১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি যখন বিজয়ের উল্লাসে উদ্বেলিত, তখনো রাজধানীর শত শত মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ ছিল না। কারণ দুই দিন আগেই ব্ল্যাক আউট আর কারফিউয়ের মধ্যে তাদের স্বজনদের বাড়ি থেকে তুলে নেয় কালো সোয়েটার আর খাকি প্যান্ট পরা মুখোশধারী হায়েনারা। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে যাঁদের তুলে নেওয়া হয়, তাঁরা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক, প্রতিথযশা সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী–এক কথায় বুদ্ধিজীবী। দেশের ওই মেধাবী সন্তানরা আর ফিরে আসেননি। বিজয়ের দুই দিন পর ঢাকার রায়েরবাজারে সন্ধান মিলল একটি বধ্যভূমির। পরিত্যক্ত এক ইটখোলার জল-কাদায় চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় পড়ে ছিল অসংখ্য লাশ। ওই লাশগুলোই ছিল বুদ্ধিজীবীদের।
এ বিষয়ে ১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানি সেনা ও স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া তাদের সহযোগীরা প্রায় ৩০০ বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে যায়, যাঁদের মধ্যে ১২৫ জন চিকিৎসক, অধ্যাপক, লেখক ও শিকের লাশ পাওয়া গেছে ঢাকার শহরতলির এক বধ্যভূমিতে। Continue Reading →