উঠন্তি মুলো পত্তনেই চেনা যায়

আজাদুর রহমান চন্দন

চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয় এবং শেখ হাসিনার সরকারের পতনও ঘটে। শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। পরে ৮ আগস্ট দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে। দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পরদিন প্রধান শিরোনাম করে ‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন যাত্রা’। সমকালের শিরোনাম ছিল ‘ছাত্র-জনতার স্বপ্নের যাত্রা’। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এই নতুন যাত্রার দুই মাস হতে চলেছে। যদিও একটি সরকারের মূল্যায়নের জন্য দুই মাস মোটেই যথেষ্ট নয়। তারপরও দ্রুত ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতা অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য নিয়ে জনমনে হতাশার জন্ম দিচ্ছে বলে মনে করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে থাকা কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারাও। তারা বলেছেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের দ্বিধা ও ধীরগতি জনগণের আশাভঙ্গের কারণ হতে পারে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাস উপলক্ষে গত ৮ সেপ্টেম্বর আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এক মাসে অনেকেই নানা প্রস্তাব নিয়ে হাজির হচ্ছে। শত শত প্রস্তাব আসছে, আসবে। কিন্তু সরকারকে ঠিক করতে হবে এই সময়ে দেশ ও দেশের জনগণের মৌলিক প্রয়োজন কী। সেটা নির্ধারণ না করলে সঠিকভাবে এই সরকার এগোতে পারবে না। কোনো বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরপরই সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সেনা সদর দপ্তরে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকের পর জনানো হয়েছিল, আওয়ামী লীগ ছাড়া সব দলের প্রতিনিধি ওই বৈঠকে ছিলেন। যদিও বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা ও বাংলাদেশ জাসদের পক্ষ থেকে সেদিনই বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, সেনা সদরের বৈঠকে তাদের কেউ ছিলেন না এবং তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো যোগাযোগও করা হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে ৫ আগস্ট রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আরেক দফা বৈঠকে রাজনীতিক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও তিন বাহিনীর প্রধানেরা অংশ নিয়েছিলেন। সেই বৈঠকেও বাম দলগুলোকে ডাকা হয়নি। অথচ বৈঠকে জাতীয় পার্টির একাধিক নেতাও ছিলেন। এই দলটি ২০০৮ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে এবং ২০১৪ ও ২০২৪ সালে সমঝোতা করে ভোটে গিয়েছিল। অন্যদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা শেখ হাসিনার সরকারের নানা গণবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আগাগোড়াই রাজপথে ছিল। কোটা সংস্কারের আন্দোলনেও তাদের সমর্থন ছিল এবং তাদের সমর্থক ছাত্র সংগঠনগুলো পুরোপুরি সক্রিয় ছিল।

নতুন যাত্রার আরেকটি বিষয়ও অনেকের পছন্দ হয়নি। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সেনাপ্রধান যে রাজনীতিকদের সঙ্গে করণীয় নিয়ে বৈঠক করেন তাদের মধ্যে ছিলেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও হেফাজতে ইসলামের মামুনুল হক। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনীতিকদের মধ্যে সবার আগে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতের আমিরের কথা উল্লেখ করেন।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ড. ইউনূস এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন উৎসবের মুহূর্তে এ স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে একটি অরাজকতা ও ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।’ কোন অরাজকতার কথা তিনি বলেছেন তা সবারই জানা। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরপরই লোকজন গণভবন, জাতীয় সংসদ ভবনে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব ও লুটপাট চালায়। হামলা করা হয় পুলিশ সদর দপ্তরসহ অসংখ্য থানায়। ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে ভাংচুর করার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিজয় সরণিতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি। একই রকম ঘটনা ঘটে সারা দেশেই। আক্রান্ত হয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। যশোরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচতারা হোটেলে ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। সরকার পতনের পর দুদিনের সহিংসতায় দেশে দুই শতাধিক মানুষ মারা যায়।

ভাস্কর্য ভাঙার মৌতাত
ময়মনসিংহে ৫ আগস্ট সন্ধ্যার আগমুহূর্তে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, আনন্দ মিছিল করার সময় একদল লোক অটোরিকশা দিয়ে গিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙতে শুরু করে। তখন সংগ্রহশালার কর্মী ও কিছু শিক্ষার্থী ওই লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, জয়নুল আবেদিন কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। একই দিনে ময়মনসিংহে শশীলজের ফোয়ারার মাঝখানে থাকা গ্রিক দেবী ভেনাসের ভাস্কর্যটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্যটি ৭ আগস্ট ভাঙচুরের পর উপড়ে ফেলা হয়েছে। মেহেরপুরের মুজিবনগরে ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিল থেকে কিছু লোক মুবিজনগর সরকারের শপথ নেওয়ার স্থানে দুই শতাধিক ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে থাকা দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধিরা ৫ থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে ৫৯টি জেলায় ১ হাজার ৪৯৪টি ভাস্কর্য, রিলিফ ভাস্কর্য (সিরামিক বা টেরাকোটা দিয়ে দেয়ালে খোদাই করে ফুটিয়ে তোলা অবয়ব), ম্যুরাল ও স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও উপড়ে ফেলার তথ্য পেয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর-প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনাকে জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হলেও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থাপনায় ভাংচুর করার কী যুক্তি থাকতে পারে? যদিও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মধ্যেও অন্যায় কিছু খোঁজে পাননি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা! বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘এর জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করুন। তিনি জাতিকে সেদিকে নিয়ে গেছেন, তার পিতার ইমেজ নষ্ট করেছেন। তিনি পুরো দেশের জন্য এমন তিক্ত কিছুই করে গেছেন যে, তারা (আন্দোলনকারীরা) এটা করতেও কিছু মনে করছে না। পুরো দায় এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর যিনি পুরো দেশকে এই পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করিয়েছেন।’ [নয়া দিগন্ত, ৮ আগস্ট ২০২৪]

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ
গত কিছুদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। হামলা শুরু হয় মূলত গত ৫ আগস্ট বিকেল থেকে। প্রথম দুই দিন হামলার ঘটনা বেশি ঘটে। সারা দেশে প্রথম আলোর প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়ে হামলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তত ১ হাজার ৬৮টি ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছেন। এর বাইরে হামলা হয়েছে ২২টি উপাসনালয়ে। হামলা হয়েছে সাতক্ষীরার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। গত ৯ আগস্ট বিডিনিউজ জানায়, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় আনন্দ সিনেপ্লেক্সে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদ গত ৩১ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৪৯ শিক্ষককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯ জনকে সপদে বহাল করা সম্ভব হয়েছে।

উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে
এসব অরাজকতার পেছনে কাদের ষড়যন্ত্র রয়েছে সেটি প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট না করলেও বিএনপির নেতারাসহ অনেকেই আওয়ামী লীগ ও ভারতকেই দোষারোপ করছেন। অথচ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, গত ৬ আগস্ট স্থানীয় এক যুবদল নেতার নেতৃত্বে একদল লোক কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বরকোটা স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঢুকে পাঠাগার ভেঙে ফেলে এবং কয়েক হাজার বই লুট করে নিয়ে যান। পরে পাঠাগারটি ভেঙে দিয়ে সেখানে ওই যুবদল নেতা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বানাতে থাকেন। গত ৫ আগস্ট যশোরের বাঘারপাড়ায় ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। পরদিন বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উদ্দীন, পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি দাউদ হোসেন, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহিম এবং বিএনপির কর্মী মহাসিন আলী স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের দখল নিয়ে সেখানে দোকানঘর তোলেন। ১৪ আগস্ট প্রথম আলো জানায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার রামচন্দ্রপুর খালের উদ্ধার করা জায়গা আবার দখলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে বানানো হয়েছে দুটি ছাপরা ঘর। একটি ঘরের দরজায় ঝোলানো হয়েছে বিএনপির সাইনবোর্ড।

এতসব নজির সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সব অরাজকতার পেছনে আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মী ও প্রতিবেশী দেশের ষড়যন্ত্র খোঁজাটা আগের আমলের মতোই লাগছে। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার ভাঙা চললেও এ বিষয়ে সরকারের ভূমিকায় অনেকেই ক্ষুব্ধ। দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজারসহ ‘আধ্যাত্মিক’ স্থাপনায় হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আবু সাঈদ খান, আবদুল হাই শিকদারসহ ৪৬ নাগরিক। গত ১২ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে তারা বলেন, হাজারো শহীদের রক্তে অর্জিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের নতুন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন নিশ্চুপ, সেই উত্তর মিলছে না।

মাজারে মাজারে হামলা-ভাংচুর
ঢাকার সাভারে পূর্ব ঘোষণা দিয়ে হামলা করা হয় সুফি সাধক কাজী জাবেরের মাজারে। ২৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতের ও্হই মলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়। এর আগে সিলেটের হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার, খাদিমপাড়া এলাকায় শাহ সুফি আব্দুল কাইয়ুমের ‘মাজার’, গাজীপুরের পোড়াবাড়ি এলাকায় শাহ সূফি ফসিহ পাগলার মাজার, ঢাকার ধামরাইয়ে ‘আধ্যাত্মিক সাধক বুচাই পাগলার মাজারে’ হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ঘটনা ঘটে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইসলামী বক্তা গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরীর ওপর হামলা এবং তাকে বহনকারী গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে তিনি হামলার শিকার হন। ভারতে মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে জেলা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত। ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলের ওই মানববন্ধনে তাহেরীর যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের নেতারা সেই কর্মসূচি বাতিল করেন। এর আগে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে দেওয়ানবাগী পীরের দরবারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন লাগানো হয়।

‘মবের’ মুল্লুক
গত ১৯ সেপ্টেম্বর একদিনেই তিনজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলল ‘মব’ বা উন্মত্ত জনতা। সেদিন ভোরে বগুড়ায়, বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই তিনজনকে পিটিয়ে মারা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় জানা যায়, ফজলুল হক মুসলিম হলে সন্ধ্যার পর ‘মোবাইল ফোনচোর’ সন্দেহে শিক্ষার্থীরা তফাজ্জল নামের মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে ধরে গেস্টরুমে নিয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় পেটায়। একপর্যায়ে মব তাকে হলের ক্যানটিনে নিয়ে ডাল-সবজি দিয়ে ভাত খেতে দিল। পরে ভরা পেটের তফাজ্জলকে আরেক দফা পেটানো হয়। এতে তফাজ্জল নিতে পারলেন না। তিনি ঢলে পড়লেন। রাত ১২টার দিকে তাকে চেতনাহীন অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক বললেন, বেশ আগেই তিনি মারা গেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে ক্যাম্পাসের একটি দোকানে ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলায় তিনি যুক্ত ছিলেন, এই অভিযোগে একদল শিক্ষার্থী তাকে পাকড়াও করে। তারা তাৎক্ষণিকভাবে শামীমকে বেধড়ক পেটায়। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক জানান, আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। আর বগুড়ার ঘটনায় দেখা যায়, শেরপুর উপজেলায় ভোরে গরুচোর সন্দেহে আসিফ প্রামাণিককে (৪০) মব পিটিয়ে মেরে ফেলে।
এভাবে সেপ্টেম্বরে দেশে অন্তত ২৮ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং পিটিয়ে আরও ১৪ জনকে আহত করা হয়েছে।

ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’; অর্থাৎ সকাল দেখেই বোঝা যায় দিনটি কেমন যাবে। বাংলায়ও আছে, ‘উঠন্তি মুলো পত্তনেই চেনা যায়’। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাসের বেশি সময়ের নানা ঘটনায় এসব প্রবাদ মনে পড়ে যায়। যদিও এই লেখাটি পোস্ট করার আগ মুহূর্তে দেখা গেল, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক স্থান ও সুফি মাজারে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার বলেছে, ধর্মীয় উপাসনালয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলো রক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে আশা করব, শুরুটা যেমনই হোক শেষটা অন্তত ভালো হবে সরকারের।

About

AZADUR RAHMAN CHANDAN E-mail : archandan64@gmail.com Date of Birth : November 27, 1964 Profession : Journalist

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *