আজাদুর রহমান চন্দন
প্রকৃত ঘটনা হলো বাকশাল গঠনে সিপিবি বা এর নেতাদের কোনো পরামর্শ ছিল না। বরং এর বিরোধিতা করেও বঙ্গবন্ধুকে নিবৃত না করতে পেরে নিরুপায় হয়ে বাকশালে যোগ দিয়েছিল সিপিবি। অবশ্য এই মিথ্যাচারের জন্য এককভাবে মওদুদকে দায়ীও করা যায় না। বাকশাল গঠন নিয়ে সিপিবি সম্পর্কে শুরু থেকেই এমন ধারণা সমাজের অনেকেরই। এই ধারণাটি বদ্ধমূল হওয়ার পেছনে সিপিবিরও দায় আছে।
সমরাস্ত্র কেনা এবং পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পাদিত ঋণচুক্তি জাতীয় স্বার্থ পরিপস্থি বলে দাবি করেছেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, জাতীয় সংসদে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়া সরকার একতরফাভাবে রাশিয়ার সঙ্গে ১২,০০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করেছে। গত জানুয়ারিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় মওদুদ এ কথা বলেন। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পাদিত ঋণচুক্তির কঠোর সমালোচনা করে মওদুদ বলেন, আমরা মনে করি, এরকম ঋণচুক্তির সঙ্গে দুর্নীতি সম্পৃক্ত থাকে। কমিশন পাওয়া যায়। আজ সেজন্য বড় কমিশন আসবে, লোভ সামলাতে না পেরে এরকম দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি করা হয়েছে। শতকরা ১০ ভাগ কমিশনের হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, ১০ পারসেন্টে কমিশন আসে ১,২০০ কোটি টাকা। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার দুর্নীতি ও একদলীয় শাসনের ধারাবাহিকতা নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে এরকম উচ্চ সুদে ঋণ চুক্তি করেছে।
মনে হয়, মওদুদ সাহেবের যত গোস্বা রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র কেনায় এবং দেশটির সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করায়। এ ছাড়াও অপ্রাসঙ্গিকভাবে তিনি এর মধ্যে টেনে এনেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং দলটির সাবেক নেতা প্রয়াত কমরেড মনি সিংহ ও মোহাম্মদ ফরহাদকে। যুগে যুগে ক্ষমতার মৌ-শিকারি মওদুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মনি সিংহ ও ফরহাদ সাহেবের সহযোগিতায় পঁচাত্তর সালে এদেশে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। বর্তমান সরকার হয়ত সেই সম্পর্ক পুরুজ্জীবিত করতে চায়।’
শুধু অপ্রাসঙ্গিকভাবেই বিষয়টি উত্থাপন করেননি মওদুদ, বরং জঘন্য মিথ্যচারও করেছেন। প্রকৃত ঘটনা হলো বাকশাল গঠনে সিপিবি বা এর নেতাদের কোনো পরামর্শ ছিল না। বরং এর বিরোধিতা করেও বঙ্গবন্ধুকে নিবৃত না করতে পেরে নিরুপায় হয়ে বাকশালে যোগ দিয়েছিল সিপিবি। অবশ্য এই মিথ্যাচারের জন্য এককভাবে মওদুদকে দায়ীও করা যায় না। বাকশাল গঠন নিয়ে সিপিবি সম্পর্কে শুরু থেকেই এমন ধারণা সমাজের অনেকেরই। এই ধারণাটি বদ্ধমূল হওয়ার পেছনে সিপিবিরও দায় আছে। সিপিবি যথাসময়ে বিষয়টি অর্থাৎ প্রকৃত ঘটনা জাতির সামনে তুলে ধরেনি। এ ক্ষেত্রে অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য বঙ্গবন্ধুর সময়ের পররাষ্ট্র সচিব ফখরুদ্দিন আহমেদ। তিনি তাঁর ‘ক্রিটিক্যাল টাইমস: মেমোয়ারস অব অ্যা সাউথ এশিয়ান ডিপ্লোম্যাট’ (সংকটময় সময়: দক্ষিণ এশীয় এক কূটনীতিকের স্মৃতিকথা) গ্রন্থে লিখেছেন, ‘তাঁকে (বঙ্গবন্ধুকে) বলা হয়েছিল, পোল্যান্ডের মতো যেসব দেশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছিল, তারাও একদলীয় ব্যবস্থায় ব্যাপক অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন করেছে। আমার বিশ্বাস, তিনি তাঁর ভাগ্নে শেখ মনির দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিলেন।’
ফখরুদ্দিন আহমেদের আলোচ্য বইটি ১৯৯৪ সালে প্রকাশ করে ইউপিএল।
এখানে উল্লেখ করা দরকার শেখ ফজলুল হক মনি বাকশাল গঠনের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার আগে পূর্ব ইউরোপ সফর করেছিলেন।