আজাদুর রহমান চন্দন
বুদ্ধিজীবীদের ঘাতক ও মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের জন্ম ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পশ্চিম খাবাশপুর গ্রামে ১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি। তার বাবা আব্দুল আলী (মৃত) মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন শান্তি কমিটির সদস্য। মুজাহিদ প্রাথমিক শিক্ষা শেষে প্রথমে ময়েজুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং পরে ফরিদপুর জিলা স্কুলে ভর্তি হন। বাবার পথ অনুসরণ করে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় মুজাহিদ যোগ দেন জামায়াতের তখনকার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘে। ১৯৬৪ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি ভর্তি হন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে। রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি হন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে তিনি ঢাকা জেলা ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি হন। পরে মুক্তিযুদ্ধ চলা অবস্থায় ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে মুজাহিদ পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পান। তখন সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী। মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজামী ও মুজাহিদের নির্দেশে ও তত্ত্বাবধানে ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল কুখ্যাত আলবদর বাহিনী।
পাকিস্তানি কূটনীতিক হুসাইন হাক্কানি তাঁর ‘পাকিস্তান বিটুইন মস্ক অ্যান্ড মিলিটারি’ গ্রন্থে লিখেছেন, অবাঙালি (বিহারি) ও পাকিস্তানপন্থী ধর্মভিত্তিক দলের লোকজন নিয়ে এক লাখ সদস্যের একটি রাজাকার বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সেনাবাহিনী। জামায়াতে ইসলামী এবং বিশেষ করে এর ছাত্রসংগঠন (যার প্রধান ছিলেন নিজামী) দুটি প্যারামিলিটারি কাউন্টারইনসারজেন্সি ইউনিট (আলবদর, আলশামস) গড়ার এ উদ্যোগে শামিল হয়। বেশির ভাগ জনবল জোগান দেয় ইসলামী ছাত্রসংঘ।
লাহোর থেকে প্রকাশিত সাইয়িদ মুতাক্কিউল রহমান ও সালিম মনসুর খালিদের ‘জাব ভুহ নাজিম-ই আলাদি’ (যখন তাঁরা নাজিম-ই আলা ছিলেন) গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে ইরানি বংশোদ্ভূত গবেষক সাইয়েদ ওয়ালি রেজা নাসের তাঁর ‘দ্য ভ্যানগার্ড অব দি ইসলামিক রেভল্যুশন : দ্য জামায়াতে ইসলামী অব পাকিস্তান’ শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন, একাত্তরে সরকারের অনুপ্রেরণায় ইসলামী ছাত্রসংঘ (আইজেটি) হয়ে ওঠে জামায়াতে ইসলামীর মূলশক্তি। আর্মির সহায়তায় এরা আলবদর ও আলশামস নামে দুটি প্যারামিলিটারি ইউনিট গঠন করে বাঙালি গেরিলাদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য।
কৌশলগত কারণে আলবদরকে রাজাকার বাহিনীর শাখা বলত পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ও জামায়াতিরা। এ কৌশল অবলম্বনের কারণ উলেখ আছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তখনকার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইয়ে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসে ১৯৭২ সালের ৩ জানুয়ারি এক বিশেষ প্রতিবেদনে আলবদর বাহিনীকে উগ্র মুসলিমদের একটি গোপন কমান্ডো ধরনের সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের একটি বিশেষ দল এ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিত এবং পরিচালনা করত। ওই সেনা কর্মকর্তাদের একজন ছিলেন ক্যাপ্টেন তাহির। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর ডেস্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পাওয়া যায়। একটি নোটে লেখা ছিল, ‘ক্যাপ্টেন তাহির, ভেহিকল ফর আলবদর’ এবং ‘ইউজ অব আলবদর’।
দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী বাহিনী হিসেবে রাজাকার বাহিনীর বিষয়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। কিন্তু ওই বাহিনী নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্রসংগঠন। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তারা ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীদের নিয়ে আলাদা বাহিনী গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। সামরিক কর্তৃপক্ষ প্রথমে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখে। তবে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা প্রস্তাবটি অন্যভাবে বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়ে ওঠেন। তাদেরই একজন বালুচ রেজিমেন্টের মেজর রিয়াজ হুসেন মালিক। তার এক সাক্ষাৎকার থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়। রাজাকারের মতোই আলবদর বাহিনীর সদস্যদেরও ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র দেওয়া হতো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একটি আলবদর ক্যাম্প থেকে কিছু পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে ২৬ ডিসেম্বর দৈনিক বাংলায় একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন তাঁর ‘ম্যাসাকার’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘ধর্মান্ধ ছাত্রদের নিয়ে গোপনে তৈরি হলো আলবদর বাহিনী। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক ও ছাত্রদের গোপনে হত্যার চক্রান্ত করে। শুধু গোপন চক্রান্তই নয়, আলবদর বাহিনী ওই সব হত্যাকাণ্ড সংঘটিতও করেছিল লোকচুর আড়ালে।’
আলবদরের নেতারা বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করেন। তাঁদের নির্দেশে একাত্তরের ডিসেম্বর মাসে ঢাকাসহ সারা দেশে শত শত বরেণ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। আলী আহসান মুজাহিদ এর আগেই (১৯৭১ সালের অক্টোবরে) পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি হন। আর নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি হন নিজামী। সে হিসাবে একাত্তরের শেষ দিকে মুজাহিদ হন আলবদর বাহিনীর প্রধান। নিজামী ও মুজাহিদের নেতৃত্বে পরিচালিত আলবদর বাহিনীর হাতে বুদ্ধিজীবী হত্যার ভয়াবহ বিবরণ দেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। একাত্তরে মুজাহিদের ভূমিকা ও তাঁর বক্তব্য-বিবৃতি তখন জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামেও প্রকাশিত হয়। একটি কমান্ডো ধরনের গোপন বাহিনী হওয়ায় আলবদর সদস্যদের নাম-পরিচয় গোপন রাখার চেষ্টা করা হতো। এদের নিয়োগসংক্রান্ত কোনো সরকারি গেজেটও প্রকাশিত হয়নি। পত্রপত্রিকায় এদের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য ছাপা হতো না। এর পরও কয়েকজনের নাম ১৯৭১ সালে পত্রিকায় বেরিয়েছে। সে বছরের ১১ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদে প্রকাশিত একটি ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘গতকাল গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি প্রদান করিয়া আলবদর আয়োজিত পথসভায় বক্তৃতা করিতেছেন আলবদর প্রধান জনাব মুজাহিদ’ (বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ)। মুক্তিযুদ্ধকালে তখনকার পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাওয়ালপিন্ডিতে পাঠানো এক গোপন প্রতিবেদনে উলেখ আছে, সে বছর ১৭ অক্টোবর রংপুরে ছাত্রসংঘের এক সভায় মুজাহিদ আলবদর বাহিনী গড়তে নির্দেশ দেন দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি।
একাত্তরে ‘আলবদর ও আলশামস কাজ করত সেনাবাহিনীর ডেথ স্কোয়াড হিসেবে। প্রগতিশীল অধ্যাপক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও চিকিৎসক তথা বুদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য এদের দায়ী করা হয়।’ এ মন্তব্য পাকিস্তানি গবেষক ও ক‚টনীতিক হুসাইন হাক্কানির। ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জামাতে ইসলামীর বর্বর বাহিনীর নিষ্ঠুরতম অভিযানে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের অসংখ্য লাশ এখনো সেই সব নারকীয় বধ্যভ‚মিতে সনাক্তহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে।’ একই পত্রিকায় ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হানাদার পাকবাহিনীর সহযোগী আল-বদরের সদস্যরা পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের পর যখন পালিয়ে গেল তখন তাদের হেডকোয়ার্টারে পাওয়া গেল এক বস্তা বোঝাই চোখ। এ দেশের মানুষের চোখ। আল-বদরের খুনিরা তাদের হত্যা করে চোখ তুলে তুলে বস্তা বোঝাই করে রেখেছিল।’ ১৯৭১ সালের ২৭ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘আর একটা সপ্তাহ সময় পেলেই ওরা বুদ্ধিজীবীদের সবাইকে শেষ করে ফেলত : আল-বদরের মাস্টার প্লান’। নিউ ইয়র্ক টাইমসে ৩ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখের প্রতিবেদনে বলা হয়, কমান্ডো স্টাইলের উগ্র মুসলিম সংগঠন কয়েক শ বাঙালি অধ্যাপক, চিকিৎসক, আইনজীবী ও সাংবাদিককে ঢাকায় একটি ইটভাটায় হত্যা করে। আলবদর নামে পরিচিত সংগঠনটির কালো সুয়েটার ও খাঁকি প্যান্ট পরা সদস্যরা যুদ্ধের শেষ তিন রাতে ওই বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। পরাজয় নিশ্চিত জেনেই আত্মসমর্পণের আগে দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় মেতে ওঠে আলবদর বাহিনী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আলবদর-রাজাকারসহ অনেক দালালকে গ্রেপ্তার করে দালাল আইনে বিচারের আওতায় আনা হয়। সেই সঙ্গে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর নেতাদের রাজনীতিতে আনতে জিয়া সরকার ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় (বিশেষ অধ্যাদেশ ৪ মে, ১৯৭৬ এবং বালাদেশ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী, ২২ এপ্রিল, ১৯৭৭)। এভাবেই আবার জামায়াতের রাজনীতি শুরু হয়। জামায়াতের নেতৃত্বে চলে আসেন নিজামী ও মুজাহিদের মতো বুদ্ধিজীবী-হত্যাকারীরা। মুজাহিদ ১৯৮২-৮৯ পর্যন্ত ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পান তিনি। পরে ২০০০ সালের ৮ ডিসেম্বর মুজাহিদ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হন এবং সেই থেকে তিনি এই দায়িত্বেই আছেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে খালেদা জিয়ার সরকারে ঠাঁই হয় মুজাহিদের। তিনি হন সমাজকল্যাণমন্ত্রী। তার গাড়িতে ওড়ে জাতীয় পতাকা। সর্বোচ্চ আদালত এই আলবদরের ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখায় জাতি গ্লানিমুক্ত হওয়ার পথে আরেক ধাপ এগোল।
একাত্তরে বুদ্ধিজীবী নিধনের পরিকল্পনা ও সহযোগিতার দায়ে আলবদর বাহিনীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ আজ ১৬ জুন সকালে এ রায় ঘোষণা করে। মুজাহিদের রায় ঘোষণার বিষয়টি এই বেঞ্চের আজকের কার্যতালিকার ১ নম্বরে ছিল। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। সকাল ৯টা ৭ মিনিটে সংক্ষিপ্ত আদেশ পড়া শুরু করেন প্রধান বিচারপতি। এক মিনিটের মধ্যে তা শেষ হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম সর্বোচ্চ সাজা পান মুজাহিদ। ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করে। ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয়। এসবের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও সহযোগিতা এবং ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দুদের হত্যা ও নিপীড়নের দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।
২০১৩ সালের ১১ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন মুজাহিদ। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল আপিল বিভাগে ওই আপিলের শুনানি শুরু হয়। নয় কার্যদিবস ধরে চলা শুনানির প্রথম ছয় দিন ট্রাইব্যুনালের রায় ও সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ। এরপর তিন কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের পাল্টাপাল্টি যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে ২৭ মে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। ওই দিনই ১৬ জুন রায়ের দিন ধার্য করে আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগ সংক্ষিপ্ত রায়ে প্রথম অভিযোগ থেকে মুজাহিদকে খালাস দেয়। শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে হত্যায় সহযোগিতা করার এই অভিযোগটি ট্রাইব্যুনালে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছিল।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে তৃতীয় অভিযোগ—ফরিদপুরের রণজিৎ নাথকে আটক রেখে নির্যাতন। মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আটকে রেখে নির্যাতনের দায়ে মুজাহিদকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এই কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে পঞ্চম অভিযোগ—নাখালপাড়া সেনাক্যাম্পে আলতাফ মাহমুদ, রুমী, বদি, আজাদ, জুয়েল প্রমুখকে হত্যায় প্ররোচনা। মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে সংশ্লিষ্টদের হত্যায় সহযোগিতার দায়ে মুজাহিদকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আপিল বিভাগ বহাল রেখেছে।
ষষ্ঠ অভিযোগ বুদ্ধিজীবী গত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা ও পরিকল্পনার দায়ে মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। এই দণ্ড বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
ফরিদপুর সদর থানাধীন হিন্দু অধ্যুষিত বকচর গ্রামে হিন্দুদের হত্যা ও নিপীড়নের সপ্তম অভিযোগে মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া এই দণ্ড কমিয়ে মুজাহিদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ।