যুদ্ধাপরাধীর তালিকা সন্ধান

আজাদুর রহমান চন্দন

একাত্তরের পঁচিশে মার্চ কালরাতে ঢাকায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে গণহত্যা আর ধ্বংসের যে তাণ্ডবলীলা শুরু করেছিল হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী, দ্রুতই তারা এর বিস্তার ঘটিয়েছিল সারাদেশে। সেই রাতের সামরিক অভিযানের ভয়াবহতা প্রকাশ করতে গিয়ে পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানেরই এক সেনা কর্মকর্তা তার বইয়ে লিখেছেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগেই অ্যাকশন শুরু হয়ে গিয়েছিল।… খুলে গিয়েছিল নরকের সবকটি দরজা।’ এভাবেই হানাদাররা পরবর্তী ৯ মাসে গোটা বাংলাদেশকেই এক বিশাল নরকে পরিণত করেছিল, যা দেখে মার্কিন সাংবাদিক সিডিনি এইচ শনবার্গ নিউইয়র্ক টাইমসে লিখেছিলেন ‘‘বেঙ্গলি’স ল্যান্ড অ্যা ভাস্ট সিমেটারি’’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি সিকান্দর আবু জাফরের লেখা এক বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল পূর্বদেশ পত্রিকায়, যার শিরোনাম ছিল ‘গ্রামে গ্রামে বধ্যভূমি তার নাম আজ বাংলাদেশ’। আর গোটা বাংলাদেশকে বধ্যভূমি বানানোর সেই দুষ্কর্মে সক্রিয় সহযোগিতা করেছিল হানাদারদের স্থানীয় কিছু দোসর শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামে নানা সংগঠন ও বাহিনী গড়ে। এদের মধ্যে আলবদর নামের জল্লাদ বাহিনীটি হয়ে উঠেছিল হানাদার বাহিনীর ‘ডেথ স্কোয়াড’।

নানা ত্রুটি-দুর্বলতা সত্ত্বেও শত বাধা-ষড়যন্ত্র পেরিয়ে আজ যখন বাংলাদেশ হানাদার-সহযোগী সেই জল্লাদদের বিচার করার মাধ্যমে সাড়ে চার দশকের পুরনো গ্লানি মোচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন একাত্তরের পরাজিত ও হাল আমলের ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তান তার পুরনো দোসরদের পক্ষ নিয়ে কূটনৈতিক রীতিনীতি উপক্ষা করে এমন বাড়াবাড়ি শুরু করল যে দীর্ঘদিন পর খোদ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী-গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবিটিও সামনে চলে এলো। এ অবস্থায় জোরেশোরেই শুরু হলো স্বাধীনতার পর বিচারের জন্য প্রস্তুত পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা খোঁজাখুঁজি। কিন্তু বহুল আলোচিত সেই ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীর তালিকা পাওয়া গেল না কোথাও। না পাওয়ারই কথা! তবে ২০০ জনের একটি তালিকা এরই মধ্যে হাজির করা হলো একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত এক সংগঠনের পক্ষ থেকে। প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে ওই তালিকা তুলে ধরা হলেও জানানো হয়নি তালিকাটি কোথা থেকে পাওয়া গেল।
গবেষণার কাজ করতে গিয়ে এর আগেও অনেকেই খোঁজ করেছেন ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীর তালিকার। কিন্তু হদিস মেলেনি। এক পর্যায়ে ১৯৯৯ সালে ব্রাসেলসপ্রবাসী গবেষক ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন ২০০ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেন নিজের গবেষণার ফল দাবি করে। সেই তালিকা আর সম্প্রতি মন্ত্রীর হাজির করা তালিকার মধ্যে কোনো অমিল নেই। এরই মধ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও একটি তালিকা পাওয়া যাচ্ছে ২০০ জনেরই, যার সঙ্গে আহমেদ জিয়াউদ্দিনের তালিকা পুরোপুরি মিলে যায়। যদিও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ২০০ জনের কোনো তালিকা করার তথ্য মেলে না দলিলপত্রে। আর এই তালিকাটি আহমেদ জিয়াউদ্দিনের হোক কিংবা ভারতীয়দেরই, এটি তো কোনো সরকারি তালিকাও নয়।

১৯৭২ সালের মার্চে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একাত্তরে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে প্রথমে জেনারেল নিয়াজি ও রাও ফরমান আলীসহ ১,১০০ পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তার বিচার করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীরা ভারতের হাতে থাকায় সে দেশের দিক থেকে তাগিদ ছিল দ্রুত অপরাধীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করার। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলে ভারত সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবন্দীদের বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছিল। সঙ্গত কারণেই এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে সংখ্যাটি অর্ধেকে নেমে আসে। রয়টার্সের বরাত দিয়ে সে বছরে ১৫ জুন পাকিস্তান টাইমসের এক খবরে বলা হয়, গণহত্যার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ ও বিচার করার লক্ষ্যে ভারত জেনারেল নিয়াজিসহ ১৫০ পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতে রাজি হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি হিন্দুস্তান টাইমসে একটি সংবাদ ছাপা হয় ঢাকা থেকে পিটিআইয়ের পাঠানো। তাতে বলা হয়, গণহত্যার অভিযোগে বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানসহ দেশটির শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের বিচার করবে। এক সরকারি মুখপাত্রের বরাত দিয়ে ওই খবরে আরো বলা হয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকার এরইমধ্যে পাঁচ শতাধিক যুদ্ধাপরাধীর একটি তালিকাও তৈরি করেছে। অন্যদিকে ভারতীয় কূটনীতিক প্রয়াত জে এন দীতি তার ‘লিবারেশন অ্যান্ড বিয়ন্ড’ বইয়ে লিখেছেন, ৯৩ হাজার পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীর মধ্যে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত পাকিস্তানির সংখ্যা বাংলাদেশ সরকার ৪০০ থেকে ১৯৭২ সালের জুলাই নাগাদ কমিয়ে আনে ১৯৫-এ।

তালিকা বা সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীদের বিচার করার কাজটি মোটেই সহজ ছিল না তখন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন, শরণার্থী হয়ে যারা দেশ ছেড়েছিল সেই কোটি মানুষের পুনর্বাসন, প্রশাসন গড়া, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে অস্ত্র জমা নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে দ্রুত শৃঙ্খলা ফেরানো, বহির্বিশ্বের স্বীকৃতি আদায়, জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ–এ সবই প্রায়োরিটি হওয়া স্বাভাবিক ছিল সদ্যস্বাধীন দেশের সরকারের কাছে। চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ আটকে পড়া কয়েক লাখ বাঙালিকে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জও ছিল বাংলাদেশের সামনে। যুদ্ধবন্দীদের বিচার এড়াতে পাকিস্তান তখন আটকে পড়া ওই বাঙালিদের ‘তুরুপের তাস’ হিসেবে ব্যবহার করছিল। তাদের রেখে দিয়েছিল অমানবিক পরিবেশে বন্দীদশায়। অনেক বাঙালি আফগানিস্তানের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে দেশে আসার চেষ্টা করে পথেই মারা যান। যারা আফগানিস্তান হয়ে পালিয়ে আসছিলেন, সেই সব বাঙালিদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ভুট্টো সরকার মাথাপিছু এক হাজার রূপি পুরষ্কার ঘোষণা করেছিল। সেই সুযোগে অনেক পাকিস্তানি তখন সাজানো অভিযোগ এনে প্রতিবেশী অনেক বাঙালিকে সপরিবারে ধরিয়েও দেয়, যাদের পুলিশি নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। পালিয়ে আসার পরও দুই লাখের মতো বাঙালি আটকে ছিল পাকিস্তানে। আটকে পড়া ওই বাঙালিদের ফেরত আনার দাবিতে তাদের স্বজনরা সারাদেশে বিােভ এমনকি অনশন শুরু করে। প্রয়োজনে পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীদের বিনিময়ে তাদের স্বজনদের ফেরত আনার দাবি জানানো হয়। ভেতরে বাইরে থেকে ক্রমাগত চাপ বাড়তে থাকে সরকারের ওপর। যুদ্ধবন্দীদের দ্রুত পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ও ভারতকে চাপ দিতে থাকে মুসলিম দেশগুলো। কারণ অনেক ভারতীয়ও আটকা পড়েছিল পাকিস্তানে। চাপ ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দিক থেকেও। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভ ঠেকাতে চীন তো ভেটোও দিয়েছিল।

পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার মতো অবস্থা এখনো আসেনি। তবে কোনোদিন আসবে না তা নয়। আর এ মুহূর্তে বিচার করা গেলেও তা কার্যকর করা কতটা সম্ভব হবে তা বলা কঠিন। কাজেই বর্তমানে যুদ্ধবন্দীদের পুরনো তালিকা নিয়ে হা-পিত্যেশ না করে নতুন করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করাটাই হবে যুক্তিসঙ্গত। কারণ সেই ১৯৫ জনের তালিকা পাওয়া গেলেও তাদের সবাই তো আর জীবিত নেই। কাজেই বিচার করতে গেলে তখন সংখ্যা আরো কমে আসবে। এ ছাড়া পুরনো সংপ্তি তালিকায় নাটের গুরুদের নাম না থাকাই স্বাভাবিক।

‘বলকানের কসাই’ নামে পরিচিত সাবেক সার্ব নেতা রদোভান কারাদিচের সম্প্রতি ৪০ বছরের কারদণ্ড হয়েছে বসনিয়ার গণহত্যায় তার সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন হিসেবে দায়) প্রমাণিত হওয়ায়। তাহলে বাংলাদেশে গণহত্যার সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি যাদের ওপর বর্তায় সেই জেনারেল ইয়াহিয়া খান, জেনারেল আবদুল হামিদ খান, ‘পূর্ব পাকিস্তানের কসাই’ নামে কুখ্যাত জেনারেল টিক্কা খানদের নাম অন্তত অপরাধীর তালিকায় না রাখাটা সমীচীন হবে না। পাকিস্তানের তখনকার মিলিটারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ওপর কেবল সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিই নয়, গণহত্যার পরিকল্পনা করা ও নির্দেশ দেওয়ার দায়ও বর্তায়। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের কাছে মতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনিই ‘অপারেশন সার্চলাইট’ গণহত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইনের ‘ম্যাসাকার’ গ্রন্থে উলে­খ আছে, ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানে জেনারেলদের এক সভায় আওয়ামী লীগ ও এর সমর্থকদের যে কোনো মূল্যে দমন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নির্দেশ দেন, ‘Kill three million of them and the rest will eat out of our hands.’ (ওদের ৩০ লাখ লোককে খতম করে ফেল, অন্যরা আমাদের হাতের পুতুল হয়ে থাকবে।) বরার্ট পেইন আরো লিখেছেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানে যে-পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ ঘটানো হয়েছে তার নির্দেশ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছ থেকে এলেও এর ধারক-বাহক ছিলেন লে. জেনারেল টিক্কা খান। ২৫ মার্চের রাতে ঢাকা ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তান চলে যাওয়ার সময় ইয়াহিয়া খানের মন্তব্য ছিল বিদ্রোহী মানুষগুলোকে শেষ করে ফেল। অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে টিক্কা খান পরের ছয়টি মাস ধরে এ আদেশটি পালন করে গেছেন।’

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তখনকার পিআরও সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তান বাহিনীর আগ্রাসনমূলক সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। বইটিতে দেখা যায়, আগ্রাসনের প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসেই। ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিণ্ডিতে সামরিক গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসকদের সম্মেলন ডাকেন ইয়াহিয়া। তাতে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ থেকে যোগ দেন লে. জেনারেল ইয়াকুব ও ভাইস অ্যাডমিরাল আহসান। রাওয়ালপিণ্ডি থেকে ফিরে ইয়াকুব তার স্টাফকে নির্দেশ দেন ‘ব্লিৎস’ নামের অপারেশন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে। ওই পরিকল্পনাটি অবশ্য পরে বাস্তবায়ন করা হয়নি। সিদ্দিক সালিকের মতে, অপারেশন সার্চলাইট প্রণয়ন করা হয় ১৮ থেকে ২০ মার্চ ঢাকায়। পরে কিছু সংশোধনী এনে ২৪ মার্চ পরিকল্পনাটি সেনা কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। সিদ্দিক সালিক লিখেছেন, একাত্তরের ১৭ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল হামিদ টেলিফোনে জেনারেল খাদিম হোসেন রাজাকে অপারেশনের পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব দেন। অপারেশনের মূল পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়নের জন্য ১৮ মার্চ সকালে ঢাকা সেনানিবাসে জিওসির অফিসে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে তাঁরা একমত হন, অপারেশনের ল্য হবে শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ডিফ্যাক্টো’ শাসন উৎখাত এবং সরকারের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। ওই বৈঠকেই জেনারেল রাও ফরমান আলী হালকা নীল কাগজের অফিসিয়াল প্যাডে একটি সাধারণ কাঠপেনসিল দিয়ে নতুন পরিকল্পনার প্রথম অংশ লিপিবদ্ধ করেন। দ্বিতীয় অংশটি লেখেন জেনারেল রাজা। তাতে অপারেশনের প্রয়োজনীয় সমর উপাদানের বণ্টন এবং বিভিন্ন ব্রিগেড ও ইউনিটের কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০ মার্চ বিকেলে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ফাগ স্টাফ হাউসে জেনারেল আব্দুল হামিদ খান ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানের সামনে হাতে লেখা পরিকল্পনাটি পড়া হয়। দুজনেই পরিকল্পনার প্রধান ধারাগুলো অনুমোদন করেন। কিন্তু জেনারেল হামিদ বাঙালি সেনাদের নিরস্ত্র করা এবং পরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া পরিকল্পনা থেকে ‘নির্ধারিত তারিখে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকরত আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেপ্তার’ করার বিষয়টি বাতিল করে দেন। ২৪ মার্চ পরিকল্পনাটি প্রথম প্রকাশ করা হয় সংশ্লিষ্ট সেনা কমান্ডারদের কাছে। ঢাকার বাইরে অবস্থানরত ব্রিগেড কমান্ডারদের সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার জন্য সে দিনই ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে জেনারেল ফরমান যশোরে এবং জেনারেল খাদিম কুমিল­ায় যান। অন্য সিনিয়র সেনা কর্মকর্তারা ঢাকা থেকে বিমানে সিলেট, রংপুর ও রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে যান। প্রায় একই রকম তথ্য আছে মেজর জেনারেল (অব.) খাদিম হোসেন রাজার ‘অ্যা স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান’ বইয়ে। রাজার নির্দেশনা অনুযায়ী তার মৃত্যুর পর বইটি প্রকাশ করতে দেয় পরিবার। বইটি বেরিয়েছে ২০১২ সালে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তখনকার প্রধান জেনারেল আবদুল হামিদ খান কেবল গণহত্যার অন্যতম রূপকারই নন, বেশ কয়েকবার তিনি বাঙালি নিধন অভিযানের অগ্রগতি দেখতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল সফরও করেন। জেনারেল নিয়াজি পরবর্তী সময়ে তার ‘দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান’ বইয়ে লিখেছেন, “জেনারেল টিক্কা খান সৈন্যদের নির্দেশ দিয়ে বলতেন, ‘(পূর্ব পাকিস্তানে) আমি মানুষ চাই না, জমি চাই’। ঢাকায় তার ওই নির্দেশ অরে অরে পালন করেছেন মেজর জেনারেল ফরমান আলী ও ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাব (ঢাকায় ৫৭ ব্রিগেডের প্রধান)।” হামুদুর রহমান কমিশনের কাছে দেওয়া সা্েয লে. ক. আজিজ আহমেদ খান বলেন, ব্রিগেডিয়ার আরবাব জয়দেবপুরের সব বাড়িঘর ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইয়াহিয়া, হামিদ, টিক্কা, আরবাবদের নাম কিন্তু কোনো তালিকায় নেই।

পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ হওয়া বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেছিলেন ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে। (সূত্র : পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। তাদের নাম-পরিচয়ও উলে­খ করা হয় বিবৃতিতে। অভিযুক্ত সেই ৩৬ জনের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফি, ব্রিগেডিয়ার রহীম আহমদ, কর্নেল ফাতিমী, কর্নেল হামিদ হোসেন শিকরী, লে. কর্নেল সাফায়াত, লে. কর্নেল সেকেন্দার, মেজর সেলিম, মেজর সামিম, মেজর আগা বোখারী, মেজর পারভেজ, মেজর সালমান মাহমুদ, মেজর ইকবাল, এফ আই ইউ ক্যাপ্টেন ক্যায়ানী, এফ আই ও ক্যাপ্টেন মাহবুব, ক্যাপ্টেন জিয়াদ, ক্যাপ্টেন শাহেদ রশীদসহ অনেকের নাম নেই আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কিংবা ভারতীয়দের কাছ থেকে পাওয়া ২০০ জনের তালিকায়। কিছু নাম আছে ডা. এম এ হাসানের তৈরি করা তালিকায়। ২০০৮ সালে তিনি ৩৬৯ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর একটি তালিকা প্রকাশ করেন। এর আগের বছর অবশ্য ‘পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী ১৯১ জন’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন ডা. হাসান।

বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করার সময় তার গায়ে হাত তুলেছিল যে কুলাঙ্গাররা তাদের নাম জানতে না পারলে কিংবা পাকিস্তানি অপরাধীদের তালিকায় উলে­খ না থাকলে আমরা নিজেরাই কি বিবেকের কাছে অপরাধী হয়ে থাকব না? পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফেরার পথে এক ব্রিটিশ সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সৈন্যরা তখন আমাকে ধাক্কা দিতে শুরু করে। আমার গায়ে হাত তোলে এবং পেছন থেকে আমাকে ঘুষি মারে।’ ব্রিটিশ টেলিভিশনে প্রচারিত ওই সাাৎকারের কিছু অংশ পূর্বদেশ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল ১৯৭২ সালের ২০ জুন। সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু অবশ্য তার গায়ে হাত তুলেছিল যে জানোয়াররা তাদের কারোর নাম বলেননি। তবে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার (অব.) জহির আলম (জেড এ) খানের ‘দ্য ওয়ে ইট ওয়াজ’ বইয়ে একজনের নাম উলে­খ আছে, সে হলো হাবিলদার মেজর খান ওয়াজির।

পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বাঙালি অফিসারদের যমদূত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল স্কোয়াড্রন লিডার ওয়াহিদকে। ‘এই জল­াদ কোথায়?’ শিরোনামে এ বিষয়ে একটি সংবাদ ছাপা হয়েছিল ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি দৈনিক বাংলায়। যমদূত ওয়াহিদের নামটিও তালিকায় নেই। যুদ্ধের শেষ দিকে  ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পালিয়ে আসার আগে সেখানকার বুদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য দায়ী করে ব্রিগেডিয়ার সাদুল্লাহ ও মেজর আবদুল্লাহর বিচার দাবি করে সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। কুমিল­া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের সেই যুক্ত বিবৃতি ১৯৭২ সালে ১৭ জানুয়ারি ছাপা হয়েছিল পূর্বদেশ পত্রিকায়ও। এই দুজনের নামও ২০০ জনের তালিকায় নেই।

লে. কর্নেল পদমর্যাদায় সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের (এসএসজি) থার্ড কমান্ডো ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তৎপর ছিলেন জেড এ খান। পরবর্তী সময়ে ব্রিগেডিয়ার হয়েছিলেন পাকিস্তান আর্মির। তার স্মৃতিচারণমূলক বই ‘দ্য ওয়ে ইট ওয়াজ’ এবং খাদিম হোসেন রাজার বই ‘অ্যা স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান ১৯৬৯-১৯৭১’ থেকে অর্ধ শতাধিক পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তার পরিচয় এবং গণহত্যায় তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জানা যায়। তাদেরই একজন মেজর সুজাউদ্দিন বাট। ঢাকায় মার্শাল ল হেডকোয়ার্টারে বাঙালিদের জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্বে থাকা এই হার্মাদের হাত থেকে বেঁচে বেরিয়েছিলেন খুব কম লোকই।

হাতে থাকা ২০০ জনের তালিকার সঙ্গে এখানে আলোচিত পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের নাম যুক্ত করে একটি খসড়া তালিকা করে দেখা যায় সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ২৫৯-এ। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওইসব ঘৃন্য অপরাধীদের অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্ত করাটাই হবে যৌক্তিক। মানুষ অন্তত জানতে পারবে একাত্তরে কারা ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত করেছিল এই দেশে। আর কখনো যদি ওই ঘাতকদের বিচার করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় তখন না হয় মৃত অপরাধীদের বাদ দিয়ে নতুন তালিকা করা যাবে। পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের এমন একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা চ‚ড়ান্ত করতে সরকারি উদ্যোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সদস্য ও গবেষকদের সমন্বয়ে একটি প্যানেল গঠন করা যেতে পারে।

গণহত্যার অভিযোগে চিহ্নিত পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তারা (খসড়া তালিকা)

১. জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান

১৯৭১ সালে ছিলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও সামরিক শাসক। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের কাছে মতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করে তিনি গোপনে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে সেনা ও অস্ত্র-সরঞ্জাম পাঠিয়ে সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেন। (সূত্র : হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট)।

এই নরপশুর লাম্পট্যের বিবরণও আছে হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্টে।

মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইনের ‘ম্যাসাকার’ গ্রন্থে উলে­খ আছে, একাত্তরের ফেব্রুয়ারিতে জেনারেলদের সভায় ইয়াহিয়া বলেছিলেন, ‘ওদের ৩০ লাখ খতম করে ফেল, অন্যরা আমাদের কথায় উঠবে বসবে।’ তার নির্দেশেই ‘অপারেশন সার্চলাইট’ তথা গণহত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়। বরার্ট পেইন আরো লিখেছেন, ‘২৫ মার্চের রাতে ঢাকা ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তান চলে যাওয়ার সময় ইয়াহিয়া খানের মন্তব্য ছিল–বিদ্রোহী মানুষগুলোকে শেষ করে ফেলুন।’

অপারেশন সার্চলাইট তথা গণহত্যার নীলনকশা ছিল সিল করা একটি প্যাকেটে। তাতে গণহত্যার খুঁটিনাটি বিবরণ পর্যন্ত ছিল এবং তাতে স্বার করেছিলেন চিফ অব স্টাফ জেনারেল হামিদ খান আর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিলেন ইয়াহিয়া খান। ২৫ মার্চ বিশেষ হেলিকপ্টারযোগে জেনারেলরা ঢাকা থেকে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছে দেন ওই প্যাকেট। (সূত্র : রফিকুল ইসলাম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, পৃষ্ঠা-৬৫)

যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি পুরোটাই তার ওপর বর্তায়।

১৯৮০ সালের ১০ আগস্ট মৃত্যু হয়েছে।

২. জেনারেল আবদুল হামিদ খান

১৯৭১ সালে ছিলেন পাকিস্তানের চিফ অব আর্মি স্টাফ বা সেনাপ্রধান। বাঙালি নিধনের ছক ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়ন তথা বাংলাদেশে গণহত্যার অন্যতম রূপকার। একাধিকবার তিনি বাঙালি নিধনের অগ্রগতি দেখতে আসেন এবং বিভিন্ন এলাকা সফর করেন। সিদ্দিক সালিক তার বইয়ে লিখেছেন, একাত্তরের ১৭ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সিওএস জেনারেল হামিদ টেলিফোনে জেনারেল খাদিম হোসেন রাজাকে অপারেশনের পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব দেন। ১৬ প্যারা সংবলিত পাঁচ পৃষ্ঠার এই পরিকল্পনার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’। পরিকল্পনায় তিনটি মূল বিষয় ছিল। এক. নিয়মিত ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টসহ সব বাঙালি সেনাকে নিরস্ত্র করা। দুই. বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলনকে নেতৃত্বহীন করার উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠকরত অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেপ্তার করা। তিন. তালিকাভুক্ত আরো ১৬ জন প্রখ্যাত ব্যক্তির বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা।

১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তখনকার লে. কর্নেল জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামের বিবরণ দিয়ে বলেছিলেন, “বাংলাদেশের উপর বর্বর হামলার প্রস্তুতি দেখতে এলেন পাক সেনাবাহিনীর জেনারেল হামিদ খান। ২১ শে মার্চ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে তাকে আপ্যায়িত করা হল মধ্যাহ্ন ভোজে। এই মধ্যাহ্ন ভোজেই পশ্চিমা সামরিক অফিসারদের কানাঘুষা আর জেনারেল হামিদের একটু ছোট্ট উক্তিতে বাঙালি অফিসাররা স্পষ্ট বুঝতে পারলেন দিন ঘনিয়ে এসেছে। হামলা অত্যাসন্ন।… জেনারেল হামিদ তখন কথা বলছিলেন ২০তম বালুচ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্নেল ফাতমীর সাথে। অনেক কথার মধ্যে অনেকটা যেন সামরিক নির্দেশের মতই কর্নেল ফাতমীকে বলে উঠলেন জেনারেল হামিদ–‘দেখ ফাতমী অভিযান (অ্যাকশন) খুব দ্রুত ও কম সময়ের মধ্যে হতে হবে। আমাদের পে কেউ যেন হতাহত না হয়’।’’ (সূত্র : স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র নবম খণ্ড)।

গণহত্যার নীলনকশা ছিল সিল করা একটি প্যাকেটে। তাতে গণহত্যার খুঁটিনাটি বিবরণ পর্যন্ত ছিল এবং তাতে স্বার করেছিলেন চিফ অব স্টাফ জেনারেল হামিদ খান। ২৫ মার্চ বিশেষ হেলিকপ্টারযোগে জেনারেলরা ঢাকা থেকে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছে দেন ওই প্যাকেট। (সূত্র : রফিকুল ইসলাম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, পৃষ্ঠা-৬৫)

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে জীবিত অবস্থায় গ্রেপ্তার করতে লে. কর্নেল জেড এ খানতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হামিদ। পরবর্তীকালে পাকিস্তান আর্মির ব্রিগেডিয়ার হয়েছিলেন জেড এ খান। তিনি তার ‘The Way It Was’ বইয়ে লিখেছেন, General Hamid then told me that I was to arrest Sheikh Mujibur Rehman and that he was to be taken alive. When I was leaving and had got to the door, General Hamid called my name and when I turned around he again called out remember he is to be taken alive and I will hold you personally responsible if he is killed.

ইয়াহিয়ার লাম্পট্যের অন্যতম সাঙ্গাত ছিলেন জেনারেল হামিদ। হামুদুর রহমান কমিশনের কাছে দেওয়া সাক্ষ্যে অন্য সেনা কর্মকর্তারা বলেন, জেনারেল হামিদও প্রায়ই ইয়াহিয়ার সঙ্গে যৌন অনাচারে শামিল হতেন।

৩. লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি (No. PA-477, POW No.-1; Corps Commander, Martial Law Administrator Zone B)

মেজর জেনালের থেকে পদোন্নতি দিয়ে ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল ঢাকায় পাঠানো হয় তাকে। ১১ এপ্রিল তিনি পাকিস্তান আর্মির ইস্টার্ন কমান্ডের কোর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নেন। একাত্তরের ৩১ আগস্ট খ অঞ্চলের (বাংলাদেশ) সামরিক আইন প্রশাসকও নিযুক্ত হন টিক্কার বদলে। গণহত্যার অন্যতম পরিকল্পক ও বাস্তবায়নকারী। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে এক নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)।

হামুদুর রহমান কমিশনের কাছে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে লুটতরাজের অভিযোগ প্রসঙ্গে মেজর জেনালের ফরমান আলী জানান, জেনারেল টিক্কা খানের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনই নিয়াজি জুনিয়র অফিসারদের বলেছিলেন, ‘রেশনের অভাবের কথা কেন বলছো তোমরা? এ দেশে কি কেউ গরু-ছাগল পালে না? এটা শত্রু-দেশ। তোমাদের যখন যা প্রয়োজন নিয়ে নেবে।’

বাংলাদেশে তার নারী নির্যাতন ও যৌন অনাচারের বিবরণ দিয়ে হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্টে বলা হয়, তার নৈশবিহারের জায়গাগুলোতে এমনকি জুনিয়র অফিসারদেরও যাতায়াত ছিল। লে. ক. আজিজ খান তার সাক্ষ্যে বলেন, ‘সৈন্যরা বলতো–কমান্ডার (নিয়াজি) নিজেই যখন ধর্ষক তখন অন্যদের থামানো যাবে কিভাবে?’ এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিমান যোগে তিনি পাকিস্তানে পান পাচারের কারবার করতেন। (সূত্র : হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট)।

বাঙালি নারীদের প্রতি নিয়াজির কুৎসিত মনোভাবের পরিচয় মেলে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার সঙ্গে তার কথোপকথনে। একাত্তরের ১১ এপ্রিল নিয়াজির সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে কমান্ড হেডকোয়ার্টারে গিয়েছিলেন রাজা। তখন নিয়াজি তাকে বলেছিলেন, ‘যুদ্ধটা নিয়ে ভেবো না, ওটা আমরা ম্যানেজ করে নেব। আপাতত তোমার বাঙালি গার্লফ্রেন্ডদের ফোন নম্বরগুলো আমাকে দাও।’ এর আগে ১০ মার্চ নিয়াজি ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টারের অপারেশন রুমে বলেছিলেন ‘ওরা (বাঙালি) আমারে চিনে নাই। এই বেজন্মা জাতির জাতটাই আমি বদলে দেব)।’ তিনি হুমকি দিলেন, বাঙালি নারীদের বিরুদ্ধে তিনি তার সৈনিকদের লেলিয়ে দেবেন। [সূত্র : মেজর জেনারেল (অব.) খাদিম হোসেন রাজা, অ্যা স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান ১৯৬৯-১৯৭১]।

যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ বিশেষ করে সাড়ে চার লাখের বেশি বাঙালি নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের মূল দায় নিজয়াজির ওপর বর্তায়। তার মৃত্যু হয়েছে ২০০৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি।

৪. লে. জেনারেল টিক্কা খান

১৯৭১ সালের মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক আইন প্রশাসক ও গভর্নরের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি গণহত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে মূল ভূমিকা রাখেন। ১১ এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত অবশ্য তিনি শুধু গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন। ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের জনসভা ম্লান করে দেওয়ার অসদুদ্দেশ্যে ইয়াহিয়া খান ৬ মার্চ গভীর রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে পরিস্থিতি বাগে আনতে ১০ মার্চ ঢাকায় এক গোলটেবিল বৈঠক এবং ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার ঘোষণা দেন। সেইসঙ্গে তিনি লে. জে. টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের নতুন গভর্নর নিয়োগ দেন। ৭ মার্চ থেকেই এই নিয়োগ কার্যকর হবে বলে উলে­খ করা হয়। ১৯৭০ সালে বেলুচিস্তানে ‘বিদ্রোহ’ দমনের নামে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ হিসেবে কুখ্যাতি অর্জনকারী টিক্কা ৭ মার্চ সামরিক বিমানে করে ঢাকায় আসেন। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি ‘বাংলার কসাই’ নামেও কুখ্যাতি অর্জন করেন। রবার্ট পেইন তার বইয়ে লিখেছেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানে যে-পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ ঘটানো হয়েছে তার নির্দেশ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছ থেকে এলেও এর ধারক-বাহক ছিলেন লে. জেনারেল টিক্কা খান। ২৫ মার্চের রাতে ঢাকা ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তান চলে যাওয়ার সময় ইয়াহিয়া খানের মন্তব্য ছিল–বিদ্রোহী মানুষগুলোকে শেষ করে ফেলুন। অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে টিক্কা খান পরের ছয়টি মাস ধরে সে আদেশটি পালন করে গেছেন।’ (সূত্র : রবার্ট পেইন, ম্যাসাকার)।

জেনারেল নিয়াজি তার বইয়ে লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫-২৬ মার্চের মধ্যরাতে জেনারেল টিক্কা আঘাত হানেন। একটি শান্তিপূর্ণ রাত পরিণত হয় দুঃস্বপ্নের রাতে, চারদিকে আর্তনাদ ও আগুন।’ (সূত্র : এ এ কে নিয়াজি, দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান)

হামুদুর রহমান কমিশনের কাছে সাক্ষ্য দানকালেও নিয়াজি স্পষ্টতই তার পূর্বসূরি লে. জেনারেল টিক্কা খানের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, সামরিক অভিযান প্রথম থেকেই অস্ত্রের সাহয্যে পরিচালিত হয় এবং অনেক জায়গায় শক্তির নির্বিচার ব্যবহার জনগণকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ করে তোলে। ওই সময় যে-তি হয় তা আর সংশোধন করা যায়নি এবং সামরিক নেতারা ‘চেঙ্গিস খান’, ‘পূর্ব পাকিস্তানের কসাই’ প্রভৃতি কুখ্যাতি অর্জন করেন।

অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনায় ঢাকা অঞ্চলে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এবং প্রদেশের অন্যান্য অঞ্চলে মেজর জেনারেল কে এইচ রাজাকে গণহত্যা চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে। (সূত্র : সিদ্দিক সালিক, উইটনেস টু সারেন্ডার)।
এই কসাইয়ের মৃত্যু হয়েছে ২০০২ সালের ২৮ মার্চ।

৫. লে. জেনারেল গুল হাসান খান

১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) ছিলেন। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যার আরেক প্রধান রূপকার। তাকে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক অভিযানের ‘intellectual planner’ও বলা হয়। শুরুতে চট্টগ্রামে বাঙালি সেনা-ইপিআর-জনতার প্রতিরোধ দমনে তৎপর ছিলেন।

জেনারেল গুল হাসান বাঙালি নিধনে কতটা বেপরোয়া ছিলেন তার প্রমাণ আছে হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্টে। ব্রিগেডিয়ার ইকবালুর রহমান শরিফ কমিশনকে জানান, বাংলাদেশে বিভিন্ন সেনা ইউনিট পরিদর্শনকালে গুল সৈন্যদের কাছে জানতে চাইতেন–‘তুমি কয়জন বাঙালি মেরেছ?’


১৯৯৯ সালে গুলের মৃত্যু হয়।

৬. মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান (PA-1364, POW No.-6)

১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক সরকারের বেসামরিক বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। শুরুতে ছিলেন গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা। বেসামরিক প্রশাসনকে সামরিক শাসনের কাজে লাগানোর অসদুদ্দেশ্যে কর্মকর্তাদের বাছাই করতেন। গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন। সেইসঙ্গে ছিলেন মিলিটারি পুলিশের প্রধান। মিলিটারি পুলিশ ছাড়াও রাজাকার-আলবদর-আলশামসসহ নিরাপত্তা বাহিনীর কোন দলকে কখন কোথায় মোতায়েন করা হবে বা কোথায় কোন অপারেশনে পাঠানো হবে সেসব বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিতেন এবং তাদের কর্মকাণ্ড তদারক করতেন। সেইসঙ্গে ছিলেন কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম প্রধান রূপকার ও নির্দেশক। অপারেশন সার্চলাইটের খসড়া করেছিলেন।

সিদ্দিক সালিকের মতে, অপারেশনের মূল পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়নের জন্য ১৮ মার্চ সকালে ঢাকা সেনানিবাসে জিওসির অফিসে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে তাঁরা একমত হন, অপারেশনের ল্য হবে শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ডিফ্যাক্টো’ শাসন উৎখাত এবং সরকারের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। ওই বৈঠকেই জেনারেল রাও ফরমান আলী হালকা নীল কাগজের অফিসিয়াল প্যাডে একটি সাধারণ কাঠপেনসিল দিয়ে নতুন পরিকল্পনার প্রথম অংশ লিপিবদ্ধ করেন। (সূত্র : সিদ্দিক সালিক, উইটনেস টু সারেন্ডার)।

পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে দুই নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। ঢাকায় আÍসমর্পণ করে এবং ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হয়।
২০০৪ সালের ২১ জানুয়ারি এই ঘাতকের মৃত্যু হয়েছে।

৭. মে. জেনারেল আবুবকর ওসমান মিঠা

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের (এসএসজি) কমান্ডার ও কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে গণহত্যার নীলনকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বিশেষভাবে সক্রিয় ছিলেন। মার্চের শুরুতে তাকে নিয়ে আসা হয় স্রেফ তার খুনে মানসিকতার জন্য।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তখনকার লে. কর্নেল জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের প্রতিরোধ সংগ্রামের বিবরণ দিয়ে বলেছিলেন, ‘২৫ মার্চ ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে উড়ে এলেন জেনারেল খাদেম হোসেন রাজা, জেনারেল আনসারি, মেজর জেনারেল মিঠা খান, লে. জেনারেল খোদাদাদ খান প্রমুখ। ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে তারা জোর করে ধরে নিয়ে গেলেন ঢাকায়। সেই সাথে নিয়ে গেলেন মেজর আমিন আহমদ চৌধুরীকেও।’ (সূত্র : স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র নবম খণ্ড)।

গণহত্যার নীলনকশা ছিল সিল করা একটি প্যাকেটে। তাতে গণহত্যার খুঁটিনাটি বিবরণ পর্যন্ত ছিল। ওই জেনারেলরা ২৫ মার্চ বিশেষ হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেন। (সূত্র : রফিকুল ইসলাম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, পৃষ্ঠা-৬৩-৬৫)।

জেনারেল রাও ফরমান আলীর মতে, মিলিটারি অ্যাকশনের ব্যাপারে তার ও জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার আপত্তির কথা জানার পর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে দুজন জেনারেল ইফতিখার জানজুয়া ও মিঠাকে ঢাকায় আনা হয়েছিল যাতে ফরমান ও খাদিম কোনো রকম দোদুল্যমানতা বা দুর্বলতা দেখালে তাদের কাছ থেকে ওই দুজন দায়িত্ব কেড়ে নেন। (সূত্র : রাও ফরমান আলী, হাউ পাকিস্তান ডিভাইডেড)।

জেনারেল এ ও মিঠা বাংলাদেশজুড়ে হত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৯৯ সালে তিনি মারা যান।

৮. মে. জেনারেল খুদাদাদ খান

ওই সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল ছিলেন। জেনারেল রাও ফরমান আলীর মতে, মিলিটারি অ্যাকশনের ব্যাপারে তার ও জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার আপত্তির কথা জানার পর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে দুজন জেনারেল ইফতিখার জানজুয়া ও মিঠাকে ঢাকায় আনা হয়েছিল যাতে ফরমান ও খাদিম কোনো রকম দোদুল্যমানতা বা দুর্বলতা দেখালে তাদের কাছ থেকে ওই দুজন দায়িত্ব কেড়ে নেন।… মেজর জেনারেল উমর ও মেজর জেনারেল খুদাদাদও সে সময় ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই তখন আগুনের মতো জ্বলছিলেন। (সূত্র : রাও ফরমান আলী, হাউ পাকিস্তান ডিভাইডেড)।

চট্টগ্রামের প্রতিরোধ সংগ্রামের বিবরণ দিয়ে জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘২৫ মার্চ ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে উড়ে এলেন জেনারেল খাদেম হোসেন রাজা, জেনারেল আনসারি, মেজর জেনারেল মিঠা খান, লে. জেনারেল খোদাদাদ খান প্রমুখ। ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে তারা জোর করে ধরে নিয়ে গেলেন ঢাকায়। সেই সাথে নিয়ে গেলেন মেজর আমিন আহমদ চৌধুরীকেও।’ (সূত্র : স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র নবম খণ্ড)।

৯. মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের ১৪ ডিভিশনের জিওসি এবং OC East Pakistan Colonel Staff ছিলেন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত। পাকিস্তান আর্মিতে বাঙালিদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র অফিসার ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে (চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার) ধরে আনার অভিযানে নেতৃত্ব দেন। পরে চট্টগ্রামে অপারেশনাল প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সিদ্দিক সালিকের মতে, অপারেশনের (অপারেশন সার্চলাইট) মূল পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়নের জন্য ১৮ মার্চ সকালে ঢাকা সেনানিবাসে জিওসির অফিসে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে তাঁরা একমত হন, অপারেশনের ল্য হবে শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ডিফ্যাক্টো’ শাসন উৎখাত এবং সরকারের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। ওই বৈঠকেই জেনারেল রাও ফরমান আলী হালকা নীল কাগজের অফিসিয়াল প্যাডে একটি সাধারণ কাঠপেনসিল দিয়ে নতুন পরিকল্পনার প্রথম অংশ লিপিবদ্ধ করেন। দ্বিতীয় অংশটি লেখেন জেনারেল রাজা। তাতে অপারেশনের প্রয়োজনীয় সমর উপাদানের বণ্টন এবং বিভিন্ন ব্রিগেড ও ইউনিটের কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল।… ২৪ মার্চ পরিকল্পনাটি প্রথম প্রকাশ করা হয় সংশ্লিষ্ট সেনা কমান্ডারদের কাছে। ঢাকার বাইরে অবস্থানরত ব্রিগেড কমান্ডারদের সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার জন্য সে দিনই ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে জেনারেল ফরমান যশোরে এবং জেনারেল খাদিম কুমিল­ায় যান। খাদিম কুমিল­ায় ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চলে যান চট্টগ্রামে। সেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাতমীর কাছে গোপনে নির্দেশটি পৌঁছে দেন এবং আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ট সিনিয়র অফিসার মজুমদারকে কৌশলে ঢাকায় ফিরিয়ে আনেন। (সূত্র : সিদ্দিক সালিক, উইটনেস টু সারেন্ডার)।
মৃত্যু হয়েছে ১৯৯৯ সালে।

১০. মেজর জেনারেল আবদুর রহিম খান

নিয়াজির সঙ্গে একাত্তরের ১ এপ্রিল ঢাকায় আসেন। তাকে পাঠানো হয় মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার স্থলাভিষিক্ত করার জন্য। ১১ এপ্রিল তিনি পাকিস্তান আর্মির ইস্টার্ন কমান্ডের ১৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব নেন। যুদ্ধের শুরুর দিকে পাকিস্তান থেকে নবম ও ১৬তম ডিভিশন বাংলাদেশে আনার আগে গোটা দেশের আর্মি ছিল ১৪তম ডিভিশনের কমান্ডে। শুরুতে এর সদর দপ্তর ছিল ঢাকায়, অধীনস্থ ব্রিগেডগুলো ছিল ময়মনসিংহ, সিলেট ও কুমিল­ায়। নিয়াজি কোর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয় রহিম খানের নেতৃত্বাধীন এই ১৪ ডিভিশনের ওপর। নবগঠিত ৩৬ এডহক ডিভিশনের ওপর ঢাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়। রহিম খানের নেতৃত্বাধীন ১৪তম ডিভিশনের সেনারা তখন চট্টগ্রামে হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা চালায়। নিয়াজির বই থেকে জানা যায়, এক পর্যায়ে রহিম খানের নেতৃত্বাধীন তিনটি ব্রিগেডের সমন্বয়ে গঠিত ১৪ ডিভিশনের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় ময়মনসিংহ সিলেট ও কুমিল­া পর্যন্ত এবং আরো অন্তর্ভুক্ত করা হয় ফেনী নদী, নোয়াখালী ও ঢাকাকে। এ ছাড়া ওই ডিভিশনের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় ভৈরব সেতুর। এই বিস্তীর্ন অঞ্চলে ওই সময় সংঘটিত সব অপরাধের দায় তার।

পরে অক্টোবর/নভেম্বরে রহিম খানের নেতৃত্বে গঠন করা হয় ৩৯ এডহক (অস্থায়) ডিভিশন। তার হেডকোয়ার্টার ছিল তখন চাঁদপুরে। ঢাকা-ভৈরব বাজার রেললাইন ধরে আশপাশের সব হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাট চলেছে তার নির্দেশে। হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট মতে, একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমান থেকে ছোড়া গুলিতে আহত হয়ে সবকিছু ফেলে পালিয়েছিলেন রহিম খান। আত্মসমর্পণের আগেই বিশেষ ব্যবস্থায় পাকিস্তানে চলে যান।

১১. মেজর জেনারেল নজর হুসেইন শাহ (PA-1170, POW No.-2)

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের ১৬ ডিভিশনের জিওসি ছিলেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে এই ডিভিশন মোতায়েন করা হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজশাহী বিভাগের। শুরুতে ডিভিশন হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয় বগুড়ায়, পরে তা হিলিতে স্থানান্তর করা হয়। এর অধীনে যুক্ত করা হয় ২৩তম ব্রিগেড (হেডকোয়ার্টার রংপুর), ২০৫ ব্রিগেড (হেডকোয়ার্টার বগুড়া) ও ৩৪তম ব্রিগেড (হেডকোয়ার্টার নাটোর)। অপারেশনের এলাকা ছিল বৃহত্তর রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুর ও পাবনা জেলা। নজর হুসেইন শাহ ওই অঞ্চলে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে নেতৃত্ব দেন।

১২. মেজর জেনারেল শওকত রেজা

এপ্রিলের শুরুতে নিয়াজি, রহিম খান ও নজর হুসেইন শাহর সঙ্গে তাকেও ঢাকায় পাঠানো হয় একটি নতুন ডিভিশনের দায়িত্ব নিতে। তাকে করা হয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের নতুন মোতায়েন করা নবম ডিভিশনের জিওসি, যার সদর দপ্তর ছিল যশোরে। ঢাকা ও খুলনা বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পদ্মা নদীর দেিণর এলাকা ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। যশোরসহ ওই অঞ্চলে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে নেতৃত্ব দেন। একাত্তরের জুলাই মাস পর্যন্ত তিনি ওই ডিভিশনের দায়িত্বে ছিলেন। পরে তার স্থলাভিষিক্ত হন মেজর জেনারেল আনসারি। নিয়াজির ভাষ্যমতে, যুদদ্ধের চাপে নিস্তেজ ও অকর্মণ্য হয়ে পড়ায় মেজর জেনারেল শওকত রেজাকে ৯ ডিভিশনের কমান্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

১৩. মেজর জেনারেল মোহাম্মদ হুসেইন আনসারি (PA-4404, POW No.-3)

যুদ্ধের শুরুতে আনসারি ব্রিগেডিয়ার ছিলেন, ঢাকায় স্টেশন কমান্ডার ছিলেন। মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার ভাষ্য মতে, লজিস্টিক এরিয়া কমান্ডার হিসেবে ঢাকায় টিক্কা খানের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর একজন ছিলেন আনসারি (সূত্র : অ্যা স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান ১৯৬৯-১৯৭১)।

২৫ মার্চ ঢাকা থেকে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা, মেজর জেনারেল মিঠা, লে. জেনারেল খোদাদাদ খানের সঙ্গে হেলিকপ্টারে করে আনসারি চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন অপরাশেন সার্চলাইট তথা গণহত্যার অভিযানের দিকনির্দেশনা নিয়ে। বাঙালি ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে তারা জোর করে ধরে নিয়ে আসেন ঢাকায়। (সূত্র : স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র নবম খণ্ড)।

এম এইচ আনসারি কিছুদিন চট্টগ্রামেও স্টেশন কমান্ডার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ওই সময় চট্টগ্রামে বাঙালি সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের হত্যা করাসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দেন। জুলাই মাসে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের নবম ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পান। সদর দপ্তর ছিল যশোরে। অপারেশনের এলাকা ছিল খুলনা, যশোর, কুিষ্টয়া, ফরিদপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালী। ওইসব অঞ্চলে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা।

১৪. মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ (PA 882, POW No.-4)

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের ৩৬ এডহক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্বে থেকে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন। যুদ্ধের শেষদিকে অস্থায়ী এই ডিভিশন গঠন করা হয়েছিল ঢাকা রার নামে। এর আগে তিনি ঊধংঃ চধশরংঃধহ ঈরারষ অৎসবফ ঋড়ৎপব (ঊচঈঅঋ)-এর ডিজি ছিলেন। ফরমান আলীর সঙ্গে মিলে ঢাকায় বুদ্ধিজীবী হত্যায় ভ‚মিকা রাখেন।

১৫. মেজর জেনারেল কাজী আবদুল মজিদ খান (PA-1734, POW No.-5)

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের ১৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি (হেডকোয়ার্টার ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়) হিসেবে সিলেট ও কুমিল­ার উত্তরাংশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দেন। একাত্তরের অক্টোবরে মেজর জেনারেল রহিম খানের নেতৃত্বে ৩৯ এডহক (অস্থায়ী) ডিভিশন গঠন করা হলে ১৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি করা হয় মজিদ খানকে।

১৬. মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আকবর

পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যায় ব্যাপক ভ‚মিকা রাখেন। বিশেষ করে টার্গেট কিলিংয়ের জন্য বাঙালিদের তালিকা তৈরি করায় তার ভ‚মিকা ছিল মুখ্য।

১৭. মেজর জেনারেল ইফতিখার জানজুয়া

অপারেশন সার্চলাইট তথা গণহত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য একাত্তরের ২৫ মার্চের আগে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল পিণ্ডির সেনা সদর দপ্তর থেকে। সে অনুযায়ী গণহত্যায় ভূমিকাও রাখেন। অপারেশন সার্চলাইট বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দিতে ২৫ মার্চ আরো কয়েকজন জেনারেলের সঙ্গে হেলিকপ্টারে করে তিনি রংপুর, রাজশাহী, যশোর, চট্টগ্রাম ও কুমিল­া ক্যান্টনমেন্টে গিয়েছিলেন। (সূত্র : রফিকুল ইসলাম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, পৃষ্ঠা-৬৩)

জেনারেল রাও ফরমান আলীর দাবি মতে, মিলিটারি অ্যাকশনের ব্যাপারে তার ও জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার আপত্তির কথা জানার পর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে দুজন জেনারেল ইফতিখার জানজুয়া ও মিঠাকে ঢাকায় আনা হয়েছিল যাতে ফরমান ও খাদিম কোনো রকম দোদুল্যমানতা বা দুর্বলতা দেখালে তাদের কাছ থেকে ওই দুজন দায়িত্ব কেড়ে নেন। (সূত্র : হাউ পাকিস্তান ডিভাইডেড)

১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর কাশ্মীর সীমান্তে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যান এই জেনারেল।

১৮. মেজর জেনারেল গোলাম উমর

ইয়াহিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন। সেনা অভ্যুত্থানের মাধমে আইউব খানের কাছ থেকে মতা দখল থেকে শুরু করে সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী দলকে মতাবঞ্চিত করার অসদুদ্দেশ্যে একটি দলের নির্বাচিত সদস্যদের জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যোগদান থেকে বিরত রাখতে প্ররোচনা দেওয়াসহ সব ষড়যন্ত্রের অন্যতম হোতা হিসেবে তাকেও চিহ্নিত করে খোদ পাকিস্তানেরই হামুদুর রহমান কমিশন। বাংলাদেশে গণহত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নেও সক্রিয় ছিলেন। রাও ফরমান আলীর মতে, মেজর জেনারেল উমর ও মেজর জেনারেল খুদাদাদও সে সময় ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই তখন আগুনের মতো জ্বলছিলেন। (সূত্র : হাউ পাকিস্তান ডিভাইডেড)

অপারেশন সার্চলাইট বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দিতে ২৫ মার্চ আরো কয়েকজন জেনারেলের সঙ্গে হেলিকপ্টারে করে তিনি রংপুর, রাজশাহী, যশোর, চট্টগ্রাম ও কুমিল­া ক্যান্টনমেন্টে গিয়েছিলেন। (সূত্র : রফিকুল ইসলাম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, পৃষ্ঠা-৬৩)

১৯. ব্রিগেডিয়ার গোলাম জিলানি খান : পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ ছিলেন। নিয়াজির পে প্রতিরা বা সমর পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। বাংলাদেশে গণহত্যায় নিবিড় ভ‚মিকা পালনকারীদের একজন। একাত্তরের জুনে তিনি সমর পরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়ন করেন। পরে তাকে মেজর জেনারেল পদ দিয়ে আইএসআইয়ের প্রধান করে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

২০. ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাব : অপারেশন সার্চলাইট বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ৫৭ ব্রিগেডের প্রধান। ২৫ মাচ কালরাত থেকে ঢাকা ও জয়দেবপুরে গণহত্যার প্রধান জল­াদ। ধ্বংসযজ্ঞেও নেতৃত্ব দেয় সে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করায় ভ‚মিকা ছিল। লে. কর্নেল আজিজ আহমেদ খান হামুদুর রহমান কমিশনের কাছে সা্েয বলেন, ব্রিগেডিয়ার আরবাব তাকে জয়দেবপুরের সব বাড়ি-ঘর ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ নির্দেশ তিনি বহুলাংশে পালন করেছেন। আরবাবসহ ছয় অফিসার ও তাদের অধীনস্থ সেনা ইউনিট বাংলাদেশে ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছিল বলে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাই পরে অভিযোগ করেছেন (সূত্র : হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট)। [The Commission report gave a quick but telling glimpse of the activities of the army when it observed that inquiry should be launched on “allegation of indulging in large scale looting of property in East Pakistan including theft of Rs 1.35 crore from the National Bank Treasury at Sirajganj persistently made against Brig Jahanzeb Arbab, former commander 57 brigade, Lt Col Muzaffar Ali Zahid, former C0 31 Field Regiment, Lt Col Basharat Ahmed, former Commander 18 Punjab, Lt Col Mohammad Taj, former CO 32 Punjab, Lt Col Mohammad Tufail, former CO 5 Field Regiment and Major Madad Hussain Sha of 18 Punjab.]

নিয়াজি তার বইয়ে লিখেছেন, ‘আমার নেতৃত্বকালে ১৪ ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল রহিমের সুপারিশে লুটতরাজ ও চুরির অভিযোগে ব্রিগেডিয়ার আরবাবকে কমান্ড থেকে অপসারণ করা হয়। তদন্ত আদালতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সামরিক আদালতে বিচার করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয় তাকে।’

এপ্রিলে আরবাবের ব্রিগেড ঝিনাইদহে সরিয়ে নেওয়া হলে ওই অঞ্চলে হত্যা, গণহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দেন তিনি।

২১. ব্রিগেডিয়ার রহিম আহমদ : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ৩২ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। বিবৃতিতে তার নাম রহীম আহমদ উলে­খ করে বলা হয় তিনি সিলেটে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।

২২. ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ সফি (PA-1044, POW No. 24) : ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টারে ২৩ ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন। শেষ দিকে ছিলেন উত্তরাঞ্চলে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে সৈয়দপুর সেনানিবাস থেকে ৪৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়ক লে. কর্নেল মানজুর সৈয়দপুরের কিছু পূর্ব দিকে অবস্থিত ২১ রাজপুত ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে যান আত্মসমর্পণের প্রস্তাব নিয়ে। ২১ রাজপুত ব্যাটালিয়ন থেকে এ সংবাদ জানার পর মিত্রবাহিনীর ৭১ মাউনটেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার পিএন কাটপালিয়া পাকিস্তান বাহিনীর ২৩ ইনফেন্ট্রি ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ সফিকে বেলা আড়াইটায় সৈয়দপুর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে দারওয়ানিতে আলোচনার জন্য আহ্বান করেন। বিকেলে উভয়পরে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়, ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে ২৩ ব্রিগেডসহ অন্যরা সৈয়দপুরের জামজামা বিমানবন্দরে আত্মসমর্পণ করবে। ১৭ ডিসেম্বর বিকেলে জামজামা বিমানবন্দরে ব্রিগেডিয়ার সফি তার পিস্তল ব্রিগেডিয়ার কাটপালিয়ার কাছে সমর্পণের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান শুরু হয়।

পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ২৯ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। সৈয়দপুর এলাকায় হত্যাকাণ্ডের জন্য তাকে দায়ী করা হয় ওই বিবৃতিতে।

২৩. ব্রিগেডিয়ার সৈয়দ আসগর হাসান (PA-1880, POW No.-28) : ৩১৩ ব্রিগেডের এই কমান্ডার মৌলভীবাজার ও সিলেটে দায়িত্বে থেকে অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দেন। তার ব্রিগেড সদর দপ্তর ছিল প্রথমে মৌলভীবাজারে। সেখান থেকে পিছু হটে সিলেটে যান।

পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ১০ নম্বর নামটি  ছিল ব্রিগেডিয়ার হাসান (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। তাকে চট্টগ্রামে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হয়। তবে শুধু ‘ব্রিগেডিয়ার হাসান’ নামে কারো তথ্য পাওয়া যায়নি। এর দ্বারা সম্ভবব ব্রিগেডিয়ার সৈয়দ আসগর হাসানকেই বোঝানো হয়েছিল।

২৪. ব্রিগেডিয়ার আবদুল কাদির খান (PA-1674, POW No.-7) : শুরুতে ছিলেন আন্তঃসার্ভিস বাছাই কমিটির সভাপতি। হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট মতে, একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের সময় যেসব বাঙালি সামরিক-বেসামরিককর্মচারী ও সিভিলিয়ান ‘বিপথগামী’ হয়েছিল বা যাদের সম্পর্কে ‘খারাপ রিপোর্ট’ ছিল তাদের ‘বাছাই’ করার দায়িত্বে ছিলেন। তখন তার হেফাজতে বিনাবিচারে কোনো কারণ ছাড়াই অনেক লোককে হত্যা করা হয়েছিল। পরে তাকে ৩৬ এডহক ডিভিশনের অধীন ৯৩ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার করা হয়। ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার ছিল ময়মনসিংহে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে গণহত্যা ও ধ্বংসলীলার জন্য দায়ী। বাঙালিদের অপহরণ করার অভিযোগ তিনি নিজেই পরে স্বীকার করেন হামুদুর রহমান কমিশনের কাছে। পরাজয়ের আগে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় পশ্চাৎপসরণের সময় মিত্রবাহিনীর হাতে বন্দী হয়েছিলেন।

পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে পাঁচ নম্বর নামটি ছিল ব্রিগেডিয়ার কাদের (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। ব্রিগেডিয়ার কাদের ঢাকায় আÍসমর্পণ করে বলে ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয় এবং ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হয় তাকে। তবে ওই নামে কোনো ব্রিগেডিয়ার ইস্টার্ন কমান্ডে থাকার বিষয়ে তথ্য মেলে না। বিবৃতিতে সম্ভবত ব্রিগেডিয়ার আবদুল কাদির খানকেই বোঝানো হয়েছিল।

২৫. ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফি : ৫৩ পদাতিক ব্রিগেডের প্রধান হিসেবে শুরুতে কুমিল­ায় ছিলেন। মেজর (অব.) রফিকের মতে, ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের অনুসন্ধানের অজুহাতে কুমিল­া সেনানিবাস থেকে ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কিছু অংশকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবং কিছু অংশকে শমসেরনগর অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২৫ মার্চ বেলা ১১টা নাগাদ এই রেজিমেন্টের সেনারা (বাঙালি) নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে বুঝতে পারেন যে অনুপ্রবেশের সংবাদটি ভুয়া। কিন্তু ততণে ইকবাল শফি তার উদ্দেশ্য হাসিল করে ফেলেন। কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই তার পশ্চিম পাকিস্তানি ইউনিটগুলো সব বাঙালি ও তাদের পরিবার-পরিজনকে বন্দী করে ফেলে। রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনার পদাতিক ও গোলন্দাজ ইউনিটগুলো ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে কুমিল­া শহরে প্রবেশ করে আক্রমণ চালায়। (সূত্র : রফিকুল ইসলাম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, পৃষ্ঠা-৮০)

চিটাগাং রিলিফ কলামের নেতৃত্ব দেন এবং এপ্রিল থেকে দায়িত্ব পান চট্টগ্রামে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ১৯ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)।

২৬. ব্রিগেডিয়ার আরিফ রাজা (PA-2235, POW No.-8) : ঢাকায় ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টারে সিগনাল কমান্ডার হিসেবে নিয়োজিত থেকে অপরাধ সংঘটিত করেন।

২৭. ব্রিগেডিয়ার আতা মুহাম্মদ খান মালিক (PA 1109, POW No.-9) : ৯৭ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ব্রিগেডের প্রধান হিসেবে চট্টগ্রামে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন।

২৮. ব্রিগেডিয়ার বশির আহমেদ (PA-1897, POW No.-11) : অস্থায়ী প্রতিরা পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা সিটির দায়িত্বে ছিলেন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে চার নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। ঢাকায় আÍসমর্পণ করে এবং ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হয় ওই বিবৃতিতে।

২৯. ব্রিগেডিয়ার ফাহিম আহমেদ খান (PA-100088, POW No.-12) : ঢাকায় ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টারে মেডিক্যাল সার্ভিসের কমান্ডার হিসেবে নিয়োজিত থেকে অপরাধ সংঘটিত করেন।

৩০. ব্রিগেডিয়ার ইফতেখার আহমেদ রানা (PA-1738, POW No.-13) : ১৪ পদাতিক ডিভিশনের অধীন ৩১৩ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে সিলেট অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন। ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার ছিল প্রথমে সিলেটে, পরে মৌলভীবাজারে। সেপ্টেম্বরে ৩১৩ ব্রিগেড থেকে ৩১ পাঞ্জাবকে আলাদা করে ৯১ মুজাহিদ ও ১২ আজাদ কাশ্মীর ব্যাটালিয়নকে অন্তর্ভুক্ত করে গঠন করা হয় ২০২ এডহক ব্রিগেড এবং এর ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় সিলেটের। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ২৬ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। মৌলভীবাজার ও সিলেটে হত্যাকাণ্ডের জন্য তাকে দায়ী করা হয় বিবৃতিতে।

৩১. ব্রিগেডিয়ার মনজুর আহমেদ (PA-3414, POW No.-16) : নবম পদাতিক ডিভিশনের অধীন ৫৭ পদাতিক ব্রিগেডের প্রধান ছিলেন। ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার ছিল ঝিনাইদহে। ওই এলাকায় নিজে অপরাধ সংঘটিত করেন এবং অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দেন। বিনাযুদ্ধে ঝিনাইদহ ত্যাগ করেছিলেন।

৩২. ব্রিগেডিয়ার শেখ মঞ্জুর হুসেইন আতিফ (PA-3547, POW No.-17) : শুরুতে কর্নেল ছিলেন এম এইচ অতিফ নামে পরিচিত এই কর্মকর্তা। পরে ১১৭ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার হন। ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার ছিল কুমিল­ায়। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ২৫ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। কুমিল­ায় বর্বরতার জন্য তাকে দায়ী করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, কর্নেল থাকাবস্থায় বরিশালে হত্যাকাণ্ড চালায়।

৩৩. ব্রিগেডিয়ার মিয়া মনসুর মুহাম্মদ (PA-2111, POW No.-18) : ঢাকা প্রতিরা স্কিমের অংশ হিসেবে ৩৯ (এডহক) ডিভিশনে ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে দায়িত্বে থেকে অপরাধ সংঘটিত করেন।

৩৪. ব্রিগেডিয়ার মিয়া তাসকিন উদ্দিন (PA-1148, POW No.-19) : পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের ৯১ এডহক ব্রিগেডের প্রধান হিসেবে রাঙামাটি এলাকায় অপরাধ সংঘটিত করেন।

৩৫. ব্রিগেডিয়ার মীর আবদুল নাইম (PA-2729, POW No.-20) : পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের ৩৪ পদাতিক ব্রিগেডের প্রধান ছিলেন। ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার ছিল নাটোরে। নাটোরসহ রাজশাহী অঞ্চলে অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দেন।

৩৬. ব্রিগেডিয়ার মুহাম্মদ আসলাম নিয়াজি (PA-1999, POW No. 22) : যুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের ১৪তম ডিভিশনের অধীন ৫৩ পদাতিক ব্রিগেডের অধিনায়ক হিসেবে ঢাকায় নিয়োজিত ছিলেন। তখন ১৪তম ডিভিশনের অধীনে চারটি ব্রিগেড ছিল ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল­া ও সিলেটে। ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিসি দেব, পরিসংখ্যান বিভাগের রিডার এএনএম মুনিরুজ্জামান, জগন্নাথ হলের হাউজ টিউটর অধ্যাপক অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য হত্যাকান্ডে নেতৃত্ব দেন। পরে সেপ্টেম্বরে ঢাকার জন্য ৩৯ এডহক ডিভিশন গঠন করা হলে ১৪ ডিভিশনের দায়িত্বে রাখা হয় সিলেট, কুমিল­া ও নোয়াখালী। তখন ৫৩ ব্রিগেডের হেডকোয়ার্টার নেওয়া হয় ফেনীতে। ওই সময় ফেনী, লাকসাম এলাকায় গণগত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দেন। হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট মতে, একাত্তরের ৯ ডিসেম্বর আসলাম নিয়াজি অধীনস্থ লোকবল ও অস্ত্র-সরঞ্জাম ফেলে লাকসাম ছেড়ে পালিয়েছিলেন কাপুরুষের মতো।

৩৭. ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ হায়াত এস জে (PA-2103, POW No.-23) : পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের নবম ডিভিশনের ১০৭ ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন। যশোর অঞ্চলে অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দেন। প্রয়োজনে মাগুরায় পরিকল্পিত পশ্চাদপসরণের আদেশ অগ্রাহ্য করে অস্ত্র-সরঞ্জাম ফেলে যশোর দুর্গ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। খুলনায় গিয়ে সেখানেও অপরাধে লিপ্ত হন।

৩৮. ব্রিগেডিয়ার এন এ আশরাফ (PA-1702, POW No.-25) : হেডকোয়ার্টার ছিল নাটোরে (ঈগউ নাটোর গেরিসন)। ওই অঞ্চলে অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দেন।

৩৯. ব্রিগেডিয়ার এস এ আনসারি (PA-3430, POW No.-26) : পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের ২৩ ব্রিগেডের (রংপুর গ্যারিসন) কমান্ডার ছিলেন। হিলির কিছু অংশ বাদে বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুরে অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দেন।

৪০. ব্রিগেডিয়ার সাদুল­াহ খান এস জে (PA-3548, POW No.-27) : শুরুতে ১৪ পদাতিক ডিভিশনে জিএস কোর-এর কর্নেল [G.S.O-1 (Operations)] হিসেবে ঢাকায় ছিলেন।অপারেশন সার্চলাইট শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে ২৫ মার্চ হেলিকপ্টারযোগে গণহত্যার দিকনির্দেশনা নিয়ে রংপুর সেনা ছাউনিতে গিয়েছিলেন সেনাদের ব্রিফ করতে। (সূত্র : রাও ফরমান আলী, হাউ পাকিস্তান ডিভাইডেড)। একই রকম তথ্য পাওয়া যায় রংপুরে কর্মরত প্রত্যদর্শী নবীন বাঙালি সেনা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের (পরে মেজর) বইয়েও। (যুদ্ধে যুদ্ধে স্বাধীনতা, পৃষ্ঠা ১০৫)
২৭ পদাতিক ব্রিগেডের প্রধান হিসেবে প্রথমে ময়মনসিংহে এবং পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়োজিত থেকে অপরাধ সংঘটিত করেন। ভৈরব বাজার সেক্টর রার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। যুদ্ধের শেষ দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পালিয়ে আসার আগে সেখানকার বুদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য তাকে দায়ী করে সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়েছিলেন কুমিল­া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা (পূর্বদেশ ১৭ জানুয়ারি ১৯৭২)।

৪১. ব্রিগেডিয়ার সৈয়দ শাহ আবদুল কাসিম (PA 2110, POW No. 29) : ঢাকায় পাকিস্তান আর্মির ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টারে আর্টিলারি ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন। টঙ্গীসহ ঢাকার উত্তরাংশে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্বদানকারীদের অন্যতম।

৪২. ব্রিগেডিয়ার তাজমাল হুসেইন মালিক (PA 2130, POW বা যুদ্ধবন্দী No.-30 ) : ২০৫ ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে বগুড়া অঞ্চলে গণগত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দেন। তার সদর দপ্তর ছিল তেলালে।

৪৩. ব্রিগেডিয়ার জি এম বাকির সিদ্দিকী : পাকিস্তান আর্মির পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ হিসেবে ঢাকাসহ দেশের সবখানে অপরাধে নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশে থেকে পান চোরাকারবারে নিয়াজির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। (সূত্র : হা. র. কমিশন রিপোর্ট)।

৪৪. ব্রিগেডিয়ার আবদুল­াহ মালিক : পাকিস্তান আর্মির পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের ২৩ ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন। তার ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার ছিল রংপুর। ওই অঞ্চলে গণহত্যাসহ সব অপরাধ চালানো হয় তার নেতৃত্বে।

অপারেশন সার্চলাইট বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দিতে ২৫ মার্চ ঢাকা থেকে কয়েকজন জেনারেল হেলিকপ্টারে করে রংপুর গেলে ব্রিগেডিয়ার মালিক হেলিপ্যাডে তাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে তাদের সরাসরি তার বাসভবনে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই সময় ১৪ ডিভিশন হেডকোয়ার্টারের কর্নেল স্টাফের হাতে একটি সিল করা প্যাকেট ছিল। মালিকের বাসায় সেটি তাকে দেওয়া হয়। কয়েক মিনিট পর জেনারেলরা চলে গেলে ব্রিগেডিয়ার মালিক ব্রিগেড সদর দপ্তরে বিভিন্ন ইউনিটপ্রধানদের এক সম্মেলন ডাকেন। সব ইউনিটপ্রধানই ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি। শুধু ইপিআরের প্রতিনিধি ছিলেন বাঙালি ক্যাপ্টেন নওয়াজিশ। তাকে ওই সম্মেলনে রাখা হয়নি। (সূত্র : রফিকুল ইসলাম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, পৃষ্ঠা-৬৩)

ব্রিগেডিয়ার মালিক রংপুরে হিন্দুদের হত্যা করার লিখিত নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তারই সহকর্মী লে. ক. আজিজ খান। (সূত্র : হা. র. কমিশন রিপোর্ট)।

৪৫. ব্রিগেডিয়ার শেরুল­াহ বেগ : পাকিস্তান আর্মির স্পেশাল সার্ভিস গ্র“পের এই কর্মকর্তা ঢাকায় নিয়োজিত থেকে অপরাধ সংঘটিত করেন।

৪৬. ব্রিগেডিয়ার হেসকি বেগ : চট্টগ্রামে নিয়োজিত ছিলেন। সেখানে অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দেন।

৪৭. ব্রিগেডিয়ার গোলাম মোহাম্মদ : ১৯৭১ সালের মে মাসে শেরুল­াহ বেগের স্থলাভিষিক্ত হয়ে অপরাধে লিপ্ত হন।

৪৮. কর্নেল মুহাম্মদ মুশারফ আলী (PA 100115, POW No.-45) : কর্নেল এম এম আলী নামে পরিচিত ছিলেন। ১৪ এডিএমএস ডিভিশনে দায়িত্বে থেকে অপরাধ সংঘটিত করেন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ৩৩ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। সিলেটে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।

৪৯. কর্নেল হামিদ হোসেন শিকরী : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ১৫ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। চট্টগ্রামে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।

৫০. কর্নেল ওসমানী : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ১৬ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। চট্টগ্রামে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।

৫১. কর্নেল ফজলে হামিদ (PA 1817, POW No.-35) : খুলনা সেক্টরের জন্য ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সের (ইপিসিএএফ) সমন্বয়ে অক্টেবরে যে নতুন ৩১৪ এডহক ব্রিগেড গঠন করা হয়েছিল তার নেতৃত্বে ছিলেন। ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার ছিল খুলনায়। ওই অঞ্চলে অপরাধ সংঘটিত করেন।

৫২. কর্নেল কে কে আফ্রিদী (PA 3799, POW No.-37) : নবম ডিভিশনের জিওসির কর্নেল স্টাফ হিসেব দায়িত্বে থেকে অপরাধ সংঘটিত করেন। এই ডিভিশনটি এপ্রিলের শুরুতে মোতায়েন করা হয়েছিল। সদর দপ্তর ছিল যশোরে। যুদ্ধের শেষ দিকে জিওসি মেজর জেনারেল এম এইচ আনসারি একটি নতুন এডহক ব্রিগেড গঠন করে তার কমান্ড ন্যস্ত করেন আফ্রিদীর কাছে। তখন আফ্রিদীকে ফরিদপুর থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত যোগাযোগপথ রার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

৫৩. কর্নেল মুহম্মদ খান (PA 1963, POW No.-44) : পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কর্মকর্তা ছিলেন। সারা দেশে অপরাধ সংঘটনে ভ‚মিকা রাখেন।

৫৪. কর্নেল মোহাম্মদ মতিন (PA 100207, POW No.-48) : ৭২ এডিএমএস ডিভিশনে দায়িত্বে থেকে অপরাধ সংঘটিত করেন।

৫৫. কর্নেল এস ডি আহমেদ : মার্চে ঢাকায় সামরিক প্রশাসকের সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। অপারেশন সার্চলাইট বাস্তবায়নকারীদের একজন। বঙ্গবন্ধুকে অপহরণ পরিকল্পনাকারীদের একজন। গ্রেপ্তার করার পর বঙ্গবন্ধুর পরিচয় নিশ্চিত করেছিলেন। এ বিষয়ে লে. কর্নেল জেড এ খান লিখেছেন, Just for fun I told him that I had arrested a man that looked like Mujib and I thought it was Mujib but was not sure. On hearing this General Tikka shot out of his chair like a jack in the box, he called for Brigadier Jilani who had heard me as he was standing just inside the office entrance. He assured the Corps Commander that he would have the matter seen to immediately, Colonel S. D. Ahmad was sent for and told to go immediately to the National Assembly to see whether I had got the genuine Sheikh Mujib or a fake. Waiting for Colonel S. D. Ahmad to return, I stepped outside the building to smoke. While I was standing and smoking, a light machine gun, sited at the headquarters perimeter wire, either accidentally or the gunner saw something, fired a short burst. For a while after the burst was fired it was quiet, then every weapon in the cantonment and in the city opened fire. Not to be outdone the anti-craft regiment on the airfield also fired, green and yellow tracer arcs criss-crossed the whole of Dacca, after a few minutes the firing ceased as suddenly as it had started. After about twenty minutes Colonel S. D. Ahmad returned and confirmed that I had arrested the genuine Sheikh Mujib.

৫৬. লে. কর্নেল ফাতমী : কর্নেল ফাতমী নামে পরিচিত এই কর্মকর্তা ২০ বালুচ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে চট্টগ্রামে নিয়োজিত ছিলেন। ২৫ মার্চ রাতে চট্টগ্রামে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে হামলা চালিয়ে এক হাজারের বেশি বাঙালি সেনাকে হত্যা করেছিল তার নেতৃত্বাধীন ওই দলটি। বাঙালি সেনাসদস্যদের আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়ে নারী-শিশুদের হত্যা করেছিল তারা বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ১২ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। চট্টগ্রামে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।

৫৭. লে. কর্নেল জহির আলম (জেড এ) খান : কর্নেল জেড এ খান নামে পরিচিত। পাকিস্তান আর্মির স্পেশাল সার্ভিস গ্র“পের (এসএসজি) থার্ড কমান্ডো ব্যাটালিয়নের কমান্ডার হিসেবে কুমিল­ায় ছিলেন। অপরেশন সার্চলাইট তথা গণহত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নে অংশ নিতে ২৫ মার্চ রাতের আগে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার ভাষ্য মতে, ‘On the night between 25 and 26 March, Lieutenant Colonel Z.A Khan was successful in arresting Sheikh Mujib without many casualities.’ জেড এ খানের নিজের লেখা বইয়েও (দ্য ওয়ে ইট ওয়াজ) ওই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ আছে। পরে চট্টগ্রামে গিয়েও অপরাধ সংঘটিত করেন। পরবর্তীকালে তিনি পাকিস্তান আর্মির ব্রিগেডিয়ার হয়েছিলেন। ২০০২ সালের ২০ জুন মারা যান।

৫৮. লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজ : পাকিস্তান আর্মির ইস্টার্ন কমান্ডের ৫৭ পদাতিক ব্রিগেডের অধীন ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা চালিয়েছিল তাজের নেতৃত্বাধীন রেজিমেন্ট ও ১৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সেনারা। জগন্নাথ হলে হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন তাজ। ২৬ মার্চ ভোরে ওই সেনারা পুরান ঢাকায় হিন্দু প্রধান এলাকায় গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। রাজশাহীতে একাত্তরের ১৫ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাবিবুর রহমানকে হত্যা করে তাজের নেতৃত্বে সেনারা।

‘নৃশংস হত্যাকারী এফ আই ইউ (ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) কর্নেল তাজ দেশের সর্বত্র পরিকল্পিতভাবে প্রথম শ্রেণির অফিসারদের হত্যা করার ব্যবস্থা করেছিল।’–পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে এমনটি দাবি করেন। (সূত্র : পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)।
তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ব্যাংকের টাকা লুট করার অভিযোগ তুলেন তারই সহকর্মীরা। (সূত্র : হা. র. কমিশন রিপোর্ট)।

৫৯. লে. কর্নেল এম ইয়াকুব মালিক (PA 3837, POW No.-122) : পাকিস্তান আর্মির ইস্টার্ন কমান্ডের ১৪ ডিভিশনের অধীন ৫৩ ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৭-২৮ মার্চ তার নির্দেশে কুমিল­া সেনানিবাসে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। এ বিষয়ে ১ ডিভিশনের জিএসও লে. কর্নেল মনসুরুল হক বলেন, ‘একজন অফিসারসহ ৯১৫ ব্যক্তিকে স্রেফ জবাই করে ফেলা হয় এক ব্যক্তির নির্দেশে।’ (সূত্র : হা. র. কমিশন রিপোর্ট)।
পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ২০ নম্বরে ছিল তার নাম। (সূত্র : পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)।

৬০. লে. কর্নেল সাফায়াত আলী : শুরুর দিকে ১৪ ডিভিশন হেডকোয়ার্টারের অধীনে ঢাকায় ৪৩ লাইট এসিকে-এসিকে রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ২৪ নম্বরে ছিল তার নাম। (সূত্র : পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)।

৬১. লে. কর্নেল সারফরাজ খান মালিক (PA-3932, POW No.-192) : মালিক সরফরাজ নামে পরিচিত, যুদ্ধ শুরুর দিকে সিলেটে ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সিও ছিলেন। সিলেটে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে নেতৃত্ব দেন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ২৭ নম্বরে ছিল তার নাম। (সূত্র : পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)।

৬২. লে. কর্নেল রিয়াজ হোসেন জাভেদ (PA-5074, POW No.-180) : লে. কর্নেল সারফরাজ খান মালিকের পরে ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সিও ছিলেন। সিলেটে অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দেন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ২৮ নম্বরে ছিল তার নাম। (সূত্র : পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)।

৬৩. লে. কর্নেল সেকেন্দার : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ৩০ নম্বরে ছিল তার নাম। (সূত্র : পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)।

৬৪. লে. কর্নেল আবদুল গফুর (PA 2200, POW No.-58) : HQ SIGEA-এ ছিলেন।

৬৫. লে. কর্নেল আফতাব এইচ কুরেশি (PA 4489, POW No.-67) : ৩৩ বালুচ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার (সিও) বা অধিনায়ক ছিলেন।

৬৬. লে. কর্নেল আবদুর রহমান আওয়ান (PA 3568, POW No.-57) : CAF-এ ছিলেন।

৬৭. লে. কর্নেল আবদুল হামিদ খান (PA 3347, POW No.-60) : ML HQ-এ ছিলেন।

৬৮. লে. কর্নেল আবদুল­াহ খান (PA 4087, POW No.-65) : ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সে (ইপিসিএএফ) ছিলেন।

৬৯. লে. কর্নেল আহমেদ মুখতার খান (PTC-4318, POW No-68) : ৩০ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার (সিও) ছিলেন।

৭০. লে. কর্নেল আমির মোহাম্মদ খান (PA-4062, POW No.-72) : 7 SEC ML-এ ছিলেন।

৭১. লে. কর্নেল আমির নওয়াজ খান (PTC-4329, POW No.-74) : ১৩ এফএফ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার (সিও) বা অধিনায়ক ছিলেন।

৭২. লে. কর্নেল আমির মোহাম্মদ খান (PA-5027, POW No.-73) : ৩৪ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার (সিও) ছিলেন।

৭৩. লে. কর্নেল এ শামস উল জামান (PA 4745, POW No.-55) : কর্নেল শামস নামে পরিচিত ছিলেন। ১৪ ডিভিশনের ১০৭ পদাতিক ব্রিগেডে এবং ২২ এফএফ রেজিমেন্টের অধিনায়ক ছিলেন। প্রথমে ছিলেন যশোরে। পরে খুলনায় পাঠানো হলেও আবার যশোরে প্রত্যাবর্তন করেন। জুন পর্যন্ত খুলনায় সহকারী উপসামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ওই অঞ্চলে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে নেতৃত্ব দেন। জুলাইয়ে যশোরের উপসামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন। ৪ এপ্রিল যশোর শহরের চাচারা মহল­ায় তার নেতৃত্বে সেনারা নির্বাচারে গুলি চালিয়ে ২০০ বাঙালিকে হত্যা করে।
মার্চ থেকে মে পর্যন্ত দফায় দফায় প্রায় ২,০০০ লোককে খুলনা সার্কিট হাউসে ধরে নিয়ে নির্যাতন করার পর কাছের ফরেস্ট ঘাটে হত্যা করা হয় তার নেতৃত্বে।

৭৪. লে. কর্নেল আশিক হুসেইন (PA-4608, POW বা যুদ্ধবন্দী নং-78) : ২৪ এফএফ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার (সিও) বা অধিনায়ক ছিলেন।

৭৫. লে. কর্নেল আজিজ খান (PA-3248, POW বা যুদ্ধবন্দী নং-81) : ৩২ বালুচ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার (সিও) ছিলেন।

৭৬. লে. কর্নেল গোলাম ইয়াসিন সিদ্দিকী (PTC-3239, POW No.-202) : স্টেশন হেডকোয়ার্টার ঢাকা অঅ ্ ছগএ

৭৭. লে. কর্নেল ইসরাত আলী আলভী (PTC-3711, POW No.-97) : হেডকোয়ার্টারে ১৪ পদাতিক ডিভিশনে ছিলেন।

৭৮. লে. কর্নেল মুক্তার আলম হীজাজী (PA-4441, POW No.-167) : ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সের (ইপিসিএএফ)

৭৯. লে. কর্নেল মোস্তফা আনোয়ার (PA-3600, POW No.-170) : ১৫ বালুচ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার (সিও) ছিলেন।

৮০. লে. কর্নেল  এম. আর কে মির্জা (PA-4100, POW No.-116) : ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার (সিও) ছিলেন।

৮১. লে. কর্নেল মতলুব হোসেন (PA-4301, POW No.-128) : ১৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সিও ছিলেন। তার নেতৃত্বে এ সেনাদল একাত্তরের ২৬ মার্চ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুরান ঢাকায় নির্বিচারে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। তাদের সঙ্গে ছিল লে. কর্নেল তাজের নেতৃত্বাধীন ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টও।

৮২. লে. কর্নেল মোহাম্মদ আকরাম (PA-2700, POW No.-140) : Tochi Scout-এ দায়িত্বে ছিলেন।

৮৩. লে. কর্নেল মোহাম্মদ আকবর (PA 2590, POW No.-152) : ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সে (ইপিসিএএফ) ছিলেন।

৮৪. লে. কর্নেল মোহাম্মদ নওয়াজ (PTC 3645, POW No.-147) : ১৫ বালুচ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার (সিও) ছিলেন।

৮৫. লে. কর্নেল মুমতাজ মালিক (PA 4766, POW No.-169) : ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টারে নিয়োজিত ছিলেন।

৮৬. লে. কর্নেল এমএমএম বেইজ (PA 4416, POW No.-138) : ৮ বালুচ রেজিমেন্টের সিও ছিলেন।

৮৭. লে. কর্নেল মাজহার হোসেন চৌহান (PA 2917, POW No.-129) : ISSC-এ দায়িত্বে ছিলেন।

৮৮. লে. কর্নেল মুক্তার আহমেদ সৈয়দ (PA 3610, POW No.-168) : HQ MLA Cav-এ দায়িত্বে ছিলেন।

৮৯. লে. কর্নেল মুস্তাফাজান (PSS-2899, POW No.-171) : HQ MLA Zone-এ দায়িত্বে ছিলেন।

৯০. লে. কর্নেল ওমান আলী খান (PA 2821, POW No.-175) : Survey Sec-এ দায়িত্বে ছিলেন।

৯১. লে. কর্নেল আবদুর রশিদ জানজুয়া : চট্টগ্রামে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। গণহত্যার জন্য পাকিস্তান থেকে আসা অস্ত্র-সরঞ্জাম বন্দরে খালাস করার অভিযানে নেতৃত্ব দেন। ২৫ মার্চ রাতে চট্টগ্রামে বাঙালি সেনাদের দিয়ে ব্যারিডে সরানোর কাজ করান। জিয়াউর রহমানকে বন্দরে ওই কাজে পাঠিয়ে বন্দী করতে চেয়েছিলেন। পরে নিজেই বন্দী হন। তাকে মেরেও ফেলা হয়।

৯২. লে. কর্নেল রশিদ আহমেদ (PA-4550, POW No.-178) : ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সের (ইপিসিএএফ) হেডকোয়ার্টারে দায়িত্বে থেকে অপরাধ সংঘটিত করেন।

৯৩. লে. কর্নেল শেখ মোহাম্মদ নাঈম (PA-4817, POW No.-196) : পাকিস্তান সেনাবহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের ৩৯ বালুচ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। হামুদুর রহমান কমিশনের কাছে তিনি স্বীকার করে বলেন, ‘সুইপ অপারেশনের সময় বহু নিরীহ মানুষকে আমরা হত্যা করেছি। এ জন্য জনমনে অসন্তোষ দেখা দেয়।’

৯৪. লে. কর্নেল শাফকত বালুচ (PA-, POW No.- ) : ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সিও ছিলেন। ২৫ মার্চ সাদুল­াহর সঙ্গে হেলিকপ্টারযোগে রংপুর সেনা ছাউনিতে গিয়েছিলেন অপারেশন সার্চলাইট তথা গণহত্যার দিকনির্দেশনা নিয়ে সেনাদের ব্রিফ করতে। (সূত্র : মেজর নাসির উদ্দিন, যুদ্ধে যুদ্ধে স্বাধীনতা, পৃষ্ঠা ১০৫)
নিয়াজির বইয়ে উলে­খ আছে, যুদ্ধে সাহস দেখাতে ব্যর্থতার জন্য শাফকাতকে কমান্ড থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন টিক্কা খান।

৯৫. লে. কর্নেল এসএফএইচ রিজভি (PA-4920, POW No.-181) : ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার (সিও) ছিলেন।

৯৬. লে. কর্নেল এসএইচ বুখারি (PA-4560, POW No.-182) : পাকিস্তান সেনাবহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের ২৯ অশ্বারোহী বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ছিলেন।

৯৭. লে. কর্নেল সৈয়দ হামিদ সাফি (PA-4368, POW No.-205) : DEF Purchase-এ দায়িত্বে ছিলেন।

৯৮. লে. কর্নেল সুলতান বাদশাহ (PA-3817, POW No.-201) : ৮ ইপিসিএএফে ছিলেন।

৯৯. লে. কর্নেল সুলতান আহমেদ (PA-5178, POW No.-200) : কুমিল­ায় ব্রিগেড মেজর ছিলেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের সিও হন। এই রেজিমেন্ট জামালপুরে নিয়োজিত ছিল।
পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ২২ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)।

১০০. লে. কর্নেল এসআরএইচএস জাফরি (PA-4518, POW No.-199) : হেডকোয়ার্টারে SIG EA-এ দায়িত্বে ছিলেন।

১০১. লে. কর্নেল জায়েদ আগা খান (PSS-3743, POW No.-216) : HQ EF LOG-এ দায়িত্বে ছিলেন।

১০২. লে. কর্নেল সাগির হোসেন সৈয়দ : শুরুতে রংপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৯ অশ্বারোহী বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। বাঙালিদের হত্যা করার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন অধীনস্ত ক্যাপ্টেনকে। বলেছিলেন, ‘কী দেখলে তো বাড়ন্ত বাঙালিদের কেমন শিাটি দেওয়া হলো।’ (সূত্র : মেজর নাসির, পৃষ্ঠা ১১০-১১১)

১০৩. মেজর সরফরাজ : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ৫ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। ঢাকাসহ দেশের সবখানে হত্যার জন্য দায়ী।

১০৪. মেজর সেলিম : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ৬ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। ঢাকাসহ দেশের সবখানে হত্যার জন্য দায়ী।

১০৫. মেজর সামিম : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ৭ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। ঢাকাসহ দেশের সবখানে হত্যার জন্য দায়ী।

১০৬. মেজর ফারুকী : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ৯ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। ঢাকাসহ দেশের সবখানে হত্যার জন্য দায়ী।

১০৭. মেজর আনিস চৌধুরী : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ১১ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। চট্টগ্রামে হত্যার জন্য দায়ী।

১০৮. মেজর আগা বুখারী : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ২১ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। চট্টগ্রামে হত্যার জন্য দায়ী।

১০৯. মেজর পারভেজ : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ৩১ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। সিলেটে হত্যার জন্য দায়ী।

১১০. মেজর সালমান মাহমুদ : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ৩৪ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। রংপুরে আÍসমর্পণ করে, তবে রাজশাহীতে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। এরা নৃশংস হত্যাকারী এফ আই ইউ কর্নেল তাজ-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। কর্নেল তাজ দেশের সর্বত্র পরিকল্পিতভাবে প্রথম শ্রেণির অফিসারদের হত্যা করার ব্যবস্থা করেছিল।

১১১. মেজর ইকবাল : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ৩৫ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। রংপুরে আÍসমর্পণ করে, তবে রাজশাহীতে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। এরা নৃশংস হত্যাকারী এফ আই ইউ কর্নেল তাজ-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। কর্নেল তাজ দেশের সর্বত্র পরিকল্পিতভাবে প্রথম শ্রেণির অফিসারদের হত্যা করার ব্যবস্থা করেছিল।

১১২. মেজর আবদুল গাফরান (PA-7059, POW No.-231) : ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

১১৩. মেজর আনিস আহমেদ (PA-5640, POW No.-284) : ২০৫ পদাতিক ব্রিগেডে ছিলেন।

১১৪. মেজর আরিফ জাভেদ (PA-7214, POW No.-290) : ২২ অশ্বারোহী বাহিনীতে ছিলেন।

১১৫. মেজর আতা মোহাম্মদ (PA 4416, POW No.-138) : ২৯ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১১৬. মেজর আবদুল হামিদ (PSS 8349, POW No.-233) : ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন। সিলেটে গণহত্যা ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটিত করেন।

১১৭. মেজর এএসপি কোরেশী (PA-7299, POW No.-301) : ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১১৮. মেজর আশফাক আহমেদ চীমা (PA 7530, POW No.-294) : ৩৯ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১১৯. মেজর আবদুল খালেক কায়ানি (PSS-8547, POW No.-241) : ৬ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১২০. মেজর আবদুল ওয়াহিদ মুঘল (PTC-4664, POW No.-256) : ২২ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে এই সেনাদলটি পিলখানায় ইপিআর সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে বাঙালি সদস্য হত্যা করেছিল।

১২১. মেজর আবদুল হামিদ খাট্টাক (PA 3838, POW No.-235) : ML HQ-এ ছিলেন।

১২২. মেজর আহমেদ হাসান খান (PA-7251, POW No.-262) : ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সে (ইপিসিএএফ) ছিলেন।

১২৩. মেজর আনিস আহমেদ খান (PRR-4438, POW No.-283) : ১৫ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১২৪. মেজর আবদুল ওয়াহিদ খান (PA-4990, POW No.-255) : ৩১ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১২৫. মেজর সিএইচ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (PA-5868, POW No.-320) : HQ MLA ZB-এ ছিলেন।

১২৬. মেজর গোলাম মোহাম্মদ (PA-4122, POW No.-348) : ২ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১২৭. মেজর গোলাম আহমেদ (PTC-4390, POW No.-358) : ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সে (ইপিসিএএফ) ছিলেন।

১২৮. মেজর গাজানফার আলী নাসির (PA-7439, POW No.-344) : ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সে (ইপিসিএএফ) ছিলেন।

১২৯. মেজর হাদি হোসেন (PA-6959, POW No.-363) : ২৪ এফএফ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৩০. মেজর হাসান মুজতবা (PA-6646, POW No.-367) : ৮ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৩১. মেজর ইফতিখার উদ্দিন আহমেদ (PTC-5733, POW No.-376) : ৩৩ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৩২. মেজর ইফতিখার আহমেদ (PA-6729, POW No.-374) : ৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৩৩. মেজর শাহ্ মোহাম্মদ ওসমান ফারুক (PA-5250, POW No.-712) : ৭ সিগন্যাল ব্যাটালিয়নে ছিলেন।

১৩৪. মেজর খুরশীদ ওমান (PA-4553, POW No.-419) : যশোর সেনানিবাসে ৬১৪/৮১৪ ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে কর্মরত ছিলেন একাত্তরের মার্চ থেকে শেষ পর্যন্ত। বাঙালি রাজনীতিক ও সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে নৃশংস নির্যাতন চালাতেন। পরিকল্পিত হত্যা ও গণহত্যার জন্য ওই এলাকার বাঙালিদের বাছাই করতেন।

১৩৫. মেজর খুরশীদ আলী (PA-3947, POW No.-423) : Survey Sec.-এ দায়িত্বে ছিলেন।

১৩৬. মেজর খিজার হায়াৎ (PA-7576, POW No.-414) : ৪ এফএফ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৩৭. মেজর মেহের মোহাম্মদ খান (PA-7657, POW No.-485) : ৩১ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৩৮. মেজর এম আবদুল­াহ খান (PTC-5911, POW No.-431) : ২৭ ব্রিগেডের অধীনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১২ নম্বর সেক্টরের উপসহকারী সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিয়োজিত থেকে অপরাধ সংঘটিত করেন। যুদ্ধের শেষ দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পালিয়ে আসার আগে সেখানকার বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেন বলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন কুমিল­া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা (পূর্বদেশ ১৭ জানুয়ারি ১৯৭২)।
প্রত্যদর্শীদের মতে, একাত্তরের ২১ নভেম্বর এই ঘাতক ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগার থেকে প্রায় ৫০ জন বাঙালিকে ধরে নিয়ে হত্যা করে।

১৩৯. মেজর মোহাম্মদ আফজাল (PA-7253, POW No.-533) : ৮ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৪০. মেজর এম ইসহাক (PA-7405, POW No.-441) : ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সে (ইপিসিএএফ) ছিলেন।

১৪১. মেজর মোহাম্মদ হাফিজ রাজা (PTC-3246, POW No.-553) : ৩৪ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৪২. মেজর মোহাম্মদ ইউনুস (PA-6870, POW No.-595) : ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৪৩. মেজর মোহাম্মদ আমিন (PA-6793, POW No.-504) : ১০৭ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

১৪৪. মেজর মোহাম্মদ লোধী (PS-3935/2935, POW No.-481) : নাটোর গেরিসনে ছিলেন।

১৪৫. মেজর মির্জা আনোয়ার বেগ (PA-6554, POW No.-493) : 88 ORD COY-এ ছিলেন।

১৪৬. মেজর এমএকে লোধী (PTC-4157, POW No.-428) : ১৬ ডিভিশন হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

১৪৭. মেজর মাদাদ হোসেন শাহ্ (PSS-4245, POW No.-459) : ১৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৪৮. মেজর মোহাম্মদ আইউব খান (PTC-3007, POW No.-৫৪৪) : ৯৭ ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর ছিলেন।

১৪৯. মেজর মোহাম্মদ শরিফ আরিয়ান (PSS-6110, POW No.-৫৮৬) : ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৫০. মেজর মোহাম্মদ ইফতেখার খান (PA-5964, POW No.-৫৫৫) : ২০২ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

১৫১. মেজর এম ইয়াহিয়া হামিদ খান (PA-2818, POW No.-৪৫৫) : ৬ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৫২. মেজর মোহাম্মদ ইয়ামিন (PSS-6150, POW No.-592) : ASC-এ ছিলেন।

১৫৩. মেজর মোহাম্মদ গজনফর (PA-5141, POW No.-527) : ISSC-এ ছিলেন।

১৫৪. মেজর মোহাম্মদ সারওয়ার (PA-7231, POW No.-583) : ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৫৫. মেজর মোহাম্মদ সিদ্দিকী (PTC-3016, POW No.-579) : ২০৫ পদাতিক ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

১৫৬. মেজর মোহাম্মদ আশরাফ (PSS-6092, POW No.-543) : ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স (ইপিসিএএফ) হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

১৫৭. মেজর মোহাম্মদ আশরাফ খান (PSS-4634, POW No.-506) : ৫৩ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

১৫৮. মেজর মোহাম্মদ সফদার (PA-5312, POW No.-604) : ISSC-এ ছিলেন।

১৫৯. মেজর এমএম ইস্পাহানী (PA-6067, POW No.-496) : ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

১৬০. মেজর মোহাম্মদ জামিল (PA-6440, POW No.-562) : ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সে (ইপিসিএএফ) ছিলেন।

১৬১. মেজর মোহাম্মদ সফি (PA-7559, POW No.-580) : ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৬২. মেজর মো. আজিম কোরেশী কোরেস (PSS-4320, POW No.-547) : ISSC-এ ছিলেন।

১৬৩. মেজর মো. জুলফিকার রাথুর (PA-6440, POW No.-525) : ১৩ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নে ছিলেন।

১৬৪. মেজর মোশতাক আহমেদ (PA 5962, POW No.-615) : Det 630 ASC-এ ছিলেন।

১৬৫. মেজর নাসির খান (PSS-7996, POW No.-634) : ২৬ এফএফ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৬৬. মেজর নাসির আহমেদ (PA-4748, POW No.-632) : ৪০৯ এঐছ ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (এফআইইউ) ছিলেন।

১৬৭. মেজর রানা জহুর মহিউদ্দিন খান (PTC-4632, POW No.-654) : ১৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৬৮. মেজর রিফাত মাহমুদ (PA-8655, POW No.-666) : ৩১ ফিল্ড রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৬৯. মেজর রুস্তম আলী (PSS-6148, POW No.-667) : ৩১৪ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

১৭০. মেজর আরএম মমতাজ খান (ACO-390, POW No.-651) : ৩১ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৭১. মেজর সরদার খান (PA-6063, POW No.-702) : এমএলএ হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

১৭২. মেজর মোহাম্মদ আজম খান (ACO-2099, POW No.-510) : ১২ একে।

১৭৩. মেজর সাইফ উল­াহ খান (PRR-3389, POW No.-686) : ISSC-এ ছিলেন।

১৭৪. মেজর এসটি হোসেন (PA-6893, POW No.-674) : ৭৩৪ এফআইসি।

১৭৫. মেজর এসএমএইচএস বুখারী (PSS-4224, POW No.-730) : ২৪ এফএফ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৭৬. মেজর সাজিদ মাহমুদ (PSS-8015, POW No.-689) : ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৭৭. মেজর শের-উর-রেহমান (PA-7415, POW No.-723) : ২৯ অশ্বারোহী বাহিনীতে ছিলেন।

১৭৮. মেজর সালামত আলী (PTC-5930, POW No.-695) : ইপিসিএএফে ছিলেন।

১৭৯. মেজর সাজ্জাদ আখতার মালিক (PA-6858, POW No.-690) : আইএসআইয়ে ছিলেন।

১৮০. মেজর সেলিম এনায়েত খান (PA-5684, POW No.-698) : 57 HQ MLZB-তে ছিলেন।

১৮১. মেজর সুলতান সাউদ (PA-7289, POW No.-735) : ইপিসিএএফে ছিলেন।

১৮২. মেজর সরফরাজ উদ্দিন (PA-6542, POW No-705) : আইএসআইয়ে ছিলেন।

১৮৩. মেজর শওকাতুল­াহ খাট্টাক (PA-5080, POW No-720) : ৩৬ সিগনাল ব্যাটালিয়নে ছিলেন।

১৮৪. মেজর সুলতান সুরখরো আওয়ান (PA-7428, POW No-737) : ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৮৫. মেজর সরফরাজ আলম (PA-7076, POW No-704) : ইপিসিএএফে ছিলেন।

১৮৬. মেজর সারওয়ার খান (PA-6851, POW No-706) : টচি স্কাউটে দায়িত্বে ছিলেন।

১৮৭. মেজর তাফির-উল ইসলাম (PA-6272, POW No-756) : নাটোর গ্যারিসন হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

১৮৮. মেজর জাউমুল মালুক (PSS-8124, POW No-785) : ১৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৮৯. মেজর রিয়াজ হুসেন মালিক : বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন। জামালপুরে জল­াদ আলবদর বাহিনীর প্রথম ব্যাচের প্রশিক ছিলেন। শেরপুরে প্রতি মাস কিলিং ও গণহত্যায় নেতৃত্ব দেন।

১৯০. মেজর নাসির আহমেদ খান শেরওয়ানী (PSS-6127, POW No-641) : ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৯১. মেজর ফায়াজ মোহাম্মদ (PSS-8534, POW No-338) : ২৯ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

১৯২. মেজর মিয়া ফখরুদ্দিন (PA-4992, POW No-487) : ৯১ পদাতিক ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

১৯৩. মেজর নাদির পারভেজ খান (PA-6726, POW No-628) : ৬ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন। বরগুনা, পিরোজপুর ও পটুয়াখালীতে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন।

১৯৪. মেজর মাহমুদ হাসান বেগ : ঠাকুরগাঁওয়ে মুক্তিযোদ্ধা সালাহউদ্দীনকে নির্মম নির্যাতনের পর বাঘের খাঁচায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল। (সূত্র : মোহাম্মদ সেলিম সম্পাদিত দিনাজপুরে মুক্তিযুদ্ধ, পৃষ্ঠা-১৭৪)

১৯৫. ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ৮ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। ঢাকাসহ দেশের সবখানে হত্যার জন্য দায়ী।

১৯৬. এফ আই ইউ ক্যাপ্টেন ক্যায়ানী : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ১৩ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। চট্টগ্রামে হত্যার জন্য দায়ী।

১৯৭. এফ আই ও ক্যাপ্টেন মাহবুব : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ১৪ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। চট্টগ্রামে হত্যার জন্য দায়ী।

১৯৮. ক্যাপ্টেন জিয়াদ : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ১৭ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। চট্টগ্রামে হত্যার জন্য দায়ী।

১৯৯. ক্যাপ্টেন শাহেদ রশীদ : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ১৮ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)। চট্টগ্রামে হত্যার জন্য দায়ী।

২০০. ক্যাপ্টেন আবদুল ওয়াহিদ (PSS-8464, POW No-806) : ৩০ ফ্রন্টিয়ার্স ফোর্সের এই কর্মকর্তা যুদ্ধের শুরু থেকেই ঢাকায় গণহত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করেন।

২০১. ক্যাপ্টেন আফতাব আহমেদ (PA-10202, POW No-817) : ৩১ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

২০২. ক্যাপ্টেন আরিফ হোসেন শাহ (PSS-8836, POW No-858) : ARTY EIZI EMD-এ ছিলেন।

২০৩. ক্যাপ্টেন আবরার হোসেন (PSS-9634, POW No-815) : ৩০ এফএফ রেজিমেন্টে ছিলেন।

২০৪. ক্যাপ্টেন আমজাদ শাব্বির বুখারী (PSS-9959, POW No-853) : ৩১ ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টে ছিলেন।

২০৫. ক্যাপ্টেন আউসাফ আহমেদ (PA-10129, POW No-876) : ৫৩ ফিল্ড রেজিমেন্টে ছিলেন।

২০৬. ক্যাপ্টেন আবদুল কাহার (PA-10185, POW No-75089) : ইপিসিএএফে ছিলেন।

২০৭. ক্যাপ্টেন আসরাফ মির্জা (PA-10985, PoW No-869) : ১২ একে পদাতিক ব্যাটালিয়নে ছিলেন।

২০৮. ক্যাপ্টেন আবদুল রশিদ নায়ার (PSS-9904, PoW No-802) : ১৯ সিগনাল ব্যাটালিয়নে ছিলেন।

২০৯. ক্যাপ্টেন আমান উল­াহ (PSS-8005, PoW No-849) : নাটোর গ্যারিসন হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

২১০. ক্যাপ্টেন আজিজ আহমেদ (PSS-9363, PoW No-882) : ৩১ ফিল্ড রেজিমেন্টে ছিলেন।

২১১. ক্যাপ্টেন গুলফরাজ খান আব্বাসী (PSS-9440, PoW No-221) : ২২ এফএফ রেজিমেন্টে ছিলেন।

২১২. ক্যাপ্টেন ইকরামুল হক (PSS-8144, PoW No-951) : ২০ অশ্বারোহী বাহিনীতে ছিলেন।

২১৩. ক্যাপ্টেন ইজাজ আহমেদ চীমা (PA-10241, PoW No-947) : আইএসআইয়ে ছিলেন।

২১৪. ক্যাপ্টেন ইফতিখার আহমেদ গোনদাল (8867, PoW No-941) : ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

২১৫. ক্যাপ্টেন ইসহাক পারভেজ (PSS-8821, POW No-964) : ২৪ এফএফ রেজিমেন্টে ছিলেন।

২১৬. ক্যাপ্টেন ইকবাল শাহ (PSS-9614, PoW No-960) : ২৯ অশ্বারোহী বাহিনীতে ছিলেন।

২১৭. ক্যাপ্টেন জাভেদ ইকবাল (PSS-6910, PoW No-976) : ৩৩ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

২১৮. ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর কৈয়ানি (PSS-9765, PoW No-972) : আরএফটি ক্যাম্পে ছিলেন।

২১৯. ক্যাপ্টেন কারাম খান (PA-7838, PoW No-985) : ৩১৫ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

২২০. ক্যাপ্টেন মানজার আমিন (PA-11554, PoW No-1047) : ২৫ এফএফ রেজিমেন্টে ছিলেন।

২২১. ক্যাপ্টেন মুজাফফর হোসেন নকভি (PSS-9387, PoW No-1255) : ১৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

২২২. ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ (PA-11551, PoW No-1178) : ৮০ ফিল্ড রেজিমেন্টে ছিলেন।

২২৩. ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ জাকির রাজা (PSS-8820, PoW No-1201) : ISSC-এ ছিলেন।

২২৪. ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আরিফ (PA-7862, PoW No-1126) : ১৪ ডিভিশন হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

২২৫. ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আশরাফ (PSS-9018, PoW No-1131) : ১২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

২২৬. ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ইকবাল (PSS-8977, PoW No-1149) : ১২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

২২৭. ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ রাফি মুনির (PSS-9927, PoW No-1069) : ১৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

২২৮. ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ জামিল (PSS-10287, PoW No-1159) : ৬ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

২২৯. ক্যাপ্টেন নাঈম সাদিক (PSS-9077, PoW No-1238) : ৪০৯ ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ) হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

২৩০. ক্যাপ্টেন শের আলী (PSS-9454, PoW No-1351) : ৩৯ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

২৩১. ক্যাপ্টেন সালমান মাহমুদ (PSS-8093, PoW No-1322) : ২৯ এফএফ রেজিমেন্টে ছিলেন।

২৩২. ক্যাপ্টেন শামশেদ সারওয়ার (PA-11009, PoW No-1325) : RFN CAMP-এ ছিলেন।

২৩৩. ক্যাপ্টেন শহীদ রেহমান (PSS-7745, PoW No-1343) : ২৯ অশ্বারোহী বাহিনীতে ছিলেন।

২৩৪. ক্যাপ্টেন সালেহ হুসেইন (PSS-10431, PoW No-1321) : ১৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

২৩৫. ক্যাপ্টেন শওকত নওয়াজ খান (PSS-9508, PoW No-1350) : ৬ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলেন।

২৩৬. ক্যাপ্টেন জাহিদ জামান (PA-7898, PoW No-1396) : ৫৩ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে ছিলেন।

২৩৭. ক্যাপ্টেন হেদায়েত উল­াহ খান (PSS-8880, PoW No-924) : ২৯ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

২৩৮. ক্যাপ্টেন মো. সিদ্দিকী (PSS-10828, PoW No-1102) : ২৭ সিগনাল ব্যাটালিয়নে ছিলেন।

২৩৯. ক্যাপ্টেন খলিল উর রহমান (10147, PoW No-993) : ঢাকা সিওডিতে ছিলেন।

২৪০. ক্যাপ্টেন হাসান ইদ্রিস (PSS-10384, PoW No-934) : ইপিসিএএফে ছিলেন।

২৪১. ক্যাপ্টেন তাহির : গণহত্যা বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নাটের গুরু মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর সহযোগী ছিলেন। ফরমানের নির্দেশে পাকিস্তান আর্মির যে বিশেষ দলটি ঢাকায় জল­াদ আলবদর বাহিনীকে প্রশিণ দিত ও পরিচালনা করত সেই দলের সদস্য ছিলেন তাহির। বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যায় জল­াদ আলবদর বাহিনীকে লজিস্টিক সাপোর্ট দিতেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর ডেস্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পাওয়া যায়। একটি নোটে লেখা ছিল, ‘ক্যাপ্টেন তাহির, ভেহিকল ফর আলবদর’ এবং ‘ইউজ অব আলবদর’। (সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস, ৩ জানুয়ারি ১৯৭২)।

২৪২. লেফটেন্যান্ট মুনীর আহমেদ বাট (PSS-11843, PoW No-1505) : ৩১ বালুচ রেজিমেন্টে ছিলেন।

২৪৩. লেফটেন্যান্ট জাফর জং (PSS-12191, PoW No-15532) : ৩৮ এফএফ রেজিমেন্টে ছিলেন।

২৪৪. সুবেদার মেজর ফয়েজ : পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর নিখোঁজ বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জনের স্ত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে ওই গুমের জন্য মূলত দায়ী করেন যে ৩৬ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে তাদের মধ্যে ২৩ নম্বরে ছিল তার নাম (পূর্বদেশ ২৩-১-১৯৭২)।

২৪৫. হাবিলদার মেজর খান ওয়াজির : বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করার সময় তার গায়ে হাত তুলেছিল যে কুলাঙ্গাররা তাদের একজন। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফেরার পথে এক ব্রিটিশ সাংবাদিককে দেওয়া সাাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সৈন্যরা তখন আমাকে ধাক্কা দিতে শুরু করে। আমার গায়ে হাত তোলে এবং পেছন থেকে আমাকে ঘুষি মারে।’ (সূত্র : পূর্বদেশ ২০ জুন ১৯৭২)। সাাৎকারে বঙ্গবন্ধু অবশ্য তার গায়ে হাত তুলেছিল যে জানোয়াররা তাদের কারোর নাম বলেননি। তবে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার জেড এ খানের ‘দ্য ওয়ে ইট ওয়াজ’ বইয়ে একজনের নাম উলে­খ আছে, সে হলো হাবিলদার মেজর খান ওয়াজির। জেড এ খানের ভাষ্য মতে, ‘When he (শেখ মুজিব) came out Havaldar Major Khan Wazir, later subedar, gave him a resounding slap on his face.’

২৪৬. সুবেদার রমজান : রাঙ্গামাটিতে ক্যাপ্টেন মুনিরের সহকারী হিসেবে অপরাধে লিপ্ত ছিলেন।

২৪৭. সুবেদার মেজর জারদাদ খান : ঢাকায় কমান্ডো ব্যাটালিয়নের সদস্য।

২৪৮. এয়ার কমোডর ইনাম উল হক খান (P-953, PoW No-65483) : পিএফ ঢাকায় বিমান বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন।

২৪৯. গ্রুপ ক্যাপ্টেন এমএ মজিদ বেগ (PAF-1069, PoW No-65484) : পিএফ ঢাকায় ছিলেন।

২৫০. ফাইট লেফটেন্যান্ট খলিল আহমেদ (PAK-5332, PoW No-65510) : পিএএফ-এ ছিলেন।

২৫১. স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল মুনিম খান : সারা দেশে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের রসদ সরবরাহ করতেন সি-১৩০ প্লেন দিয়ে।

২৫২. স্কোয়াড্রন লিডার শোয়েব আলম : তেজগাঁও বিমানবন্দরে এয়ার অবজারভার ইউনিটের সিকিউরিটি ইন-চার্জ ছিলেন।

২৫৩. স্কোয়াড্রন লিডার ওয়াহিদ : পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বাঙালি অফিসারদের যমদূত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল স্কোয়াড্রন লিডার ওয়াহিদকে। ‘এই জল­াদ কোথায়?’ শিরোনামে এ বিষয়ে একটি সংবাদ ছাপা হয়েছিল ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি দৈনিক বাংলায়।

২৫৪. রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শরিফ (P-138, PoW No-71755) : নৌবাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন।

২৫৫. কমোডর ইকরামুল হক মালিক (PN-108, PoW No-71756) : পোর্ট ট্রাস্টে ছিলেন।

২৫৬. কমোডর খতিব মাসুদ হোসেন (219, PoW No-71757) :

২৫৭. কমোডর আর এ মুমতাজ : চট্টগ্রামে পাকিস্তান নৌবাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। গোয়েন্দা তৎপরতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের জিজ্ঞাসাবাদে সক্রিয় অংশ নিয়েছিল তার বাহিনী।

২৫৮. কমান্ডার তারিক কামাল খান : ডেস্ট্রয়ার পিএনএস জাহাঙ্গীরের কামান্ডার ছিলেন। চট্টগ্রামে ইপিআর সদর দপ্তর ধ্বংস করতে সেনাবাহিনীকে গোলাবর্ষণ করে সহায়তা দেন।

২৫৯. লে. কমান্ডার শাহমুন আলম খান : আইএসআইয়ের হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন। রাঙ্গামাটি পুনর্দখলে সাহায্য করেন।

Note : তবে একজন বাঙালি মেজরও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে তাদের  সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাঙালির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের নামে অপরাধে জড়ানোয় তার নামটিও এখানে যুক্ত করা যেতে

পারে। সে ক্ষেত্রে মোট সংখ্যা হবে ২৬০

একাত্তরে বাঙালির বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে আহত হয়েছিল ওই মেজর। চিকিৎসার জন্য তখন তাকে পশ্চিম পাকিস্তান পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে জেড এ খান পরে তার এক বইয়ে লিখেছেন : From Dacca, Major General Mitha ordered me to mount a raid on Radio Pakistan Chittagong whose transmitter was being used by Major Zia ur Rehman as the Bangladesh Radio. When I inquired from Major Salman, Major Mannan and Captain Sajjad if they knew where in Chittagong the transmitters were located everyone said they had seen the masts but did not remember the location. I tried the Navy, they also did not know. … After the party crossed the high water mark Major Mannan made inquiries about the location of the transmitter from the residents of houses on the river bank and the party moved in the direction indicated. After going for some distance it ran into a rebel patrol, Major Mannan talked to them and then grabbed the sten gun of the man he was talking to, the man fired and the bullet went through Major Mannan’s palm. জেড এ খান আরো লিখেছেন, Major Mannan walked and ran along the Kaptai-Chittagong road to the Chittagong cantonment and reported the mishap of the raiding party to Lieutenant Colonel Fatmi who reported it to Major General Khadim Raja on the wireless. I was sent for and spoke to Major Mannan who told me what had happened and told me the exact location of the transmitter. এর আগে এক জায়গায় জেড এ খান লেখেন, On the morning of 26 March, at about eight, I received a telephone call from Major General Mitha to report immediately at the helipad, there the general told me that the previous night 53 Brigade Headquarters and 24 FF had been ordered to move to Chittagong, contact with Chittagong had been lost and there was no contact with 53 Brigade. Major General Mitha said that we would take two MI 8 helicopters, go to Commilla, pick up two platoons from my battalion and go to Chittagong. At Commilla when the helicopters landed on the ground adjacent to the 53 Brigade Headquarters, there was no reaction from the brigade headquarters. The first officer to come to the helicopters was a East Pakistani major who was in charge of the Inter-Services Intelligence. In his vehicle we went to the brigade headquarters where the brigade major, Major Sultan, later lieutenant colonel, was sitting in his office, the general gave a bit of his mind for not checking why the helicopters had come. I telephoned my battalion headquarters and told my adjutant to bring sixty men with weapons and ammunition to the brigade headquarters and that they would be going to Chittagong and that Major Mannan, the Bengali company commander was to be included.

About

AZADUR RAHMAN CHANDAN E-mail : archandan64@gmail.com Date of Birth : November 27, 1964 Profession : Journalist (Working at The Daily Kaler Kantho) Academic Qualification : BScAg (Hons) from Bangladesh Agricultural University Institute : Patuakhali Agricultural College

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *