দুই দশকের নিভৃতচারী এক পৃষ্ঠপোষকের বিদায়

আজাদুর রহমান চন্দন

ছাত্র আন্দোলন, ক্ষেতমজুর আন্দোলন ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের পুরোভাগে থেকে এক পর্যায়ে আড়ালে চলে গিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ দুই দশক নেপথ্যে নিভৃতেই ছিলেন। তবুও ছিলেন সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গেই। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলেন অভিভাবকের মতো। তিনি সাবেক ছাত্রনেতা, ইউকসুর সাবেক ভিপি খন্দকার মোহাম্মদ ফারুক। ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রবিবার দুপুরে মৃত্যু হয়েছে তার।
ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি খন্দকার ফারুকের বয়স পঞ্চাশের কোঠা পেরোয়নি। এমন অকালে তার চলে যাওয়া মানা যায় না।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বছর দুয়েক আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন খন্দকার ফারুক। তখন কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছিলেন তিনি। মাঝে-মধ্যেই কাশির সঙ্গে রক্ত বের হত। মাসখানেক আগেও একবার ব্যাংককে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। শুক্রবার কাশির সঙ্গে রক্ত বের হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ব্যাংককে যান। রবিবার দুপুরে হোটেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেখানেই তিনি মারা যান।
গত শতকের আটের দশকের সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক খন্দকার ফারুক ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ইউকসু) নির্বাচিত সহসভাপতি ছিলেন।
এরপর ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হন খন্দকার ফারুক। ১৯৮৪ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে বিদায় নিয়ে তিনি যোগ দেন কমিউনিস্ট ও ক্ষেতমজুর আন্দোলনে।
খন্দকার ফারুকের মৃত্যুতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, ক্ষেতমজুর সমিতি, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন শোক জানিয়েছে। ছাত্র আন্দোলনে তার সহযোদ্ধারা শোক জানিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন,গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। তৎকালীন ছাত্র আন্দোলনে তার জনপ্রিয়তা ছিল বিস্ময়কর। বিবৃতিতে বলা হয়, “১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ জয়নালের লাশ নিজের কাঁধে বহন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে পুলিশের থাবা থেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালে যখন সামরিক শাসক এরশাদের ট্রাক মিছিলের ওপর উঠিয়ে দেয়া হয়, তখন তিনি ট্রাকের চাপায় গুরুতর আহত হয়ে অল্পের জন্য বেঁচে যান।”
‘৮২-৯০ স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্রনেতৃবৃন্দ’ ব্যানারে ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মুশতাক হোসেনের পাঠানো ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়,‌ ২০১৩ সালে সূচিত গণজাগরণ আন্দোলনেও তিনি একজন নেপথ্য সংগঠক ও পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করেন।
বিবৃতিতে সই করেছেন আখতারুজ্জামান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ফজলে হোসেন বাদশা, মুনীরউদ্দীন আহমেদ, মিজানুর রহমান মানু, খ ম জাহাঙ্গীর, আনোয়ারুল হক, বাহালুল মজনুন চুন্নু, সুলতান মো. মনসুর, আবদুল মান্নান, শিরীন আখতার, তাহের উল্লাহ, মোস্তফা ফারুক, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মোশরেফা মিশু, বজলুর রশিদ ফিরোজ প্রমুখ।

About

AZADUR RAHMAN CHANDAN E-mail : archandan64@gmail.com Date of Birth : November 27, 1964 Profession : Journalist (Working at The Daily Kaler Kantho) Academic Qualification : BScAg (Hons) from Bangladesh Agricultural University Institute : Patuakhali Agricultural College

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *